পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার মধ্যে প্রায় একশো কোটি মানুষ এখনও খোলা আকাশের নিচে বসবাস করে। বাড়ি তৈরির জায়গা, খরচ এবং প্রযুক্তিগত প্রতিবন্ধকতার জন্য এই একশো কোটি মানুষ স্থায়ীভাবে আবাসন থেকে বঞ্চিত হয়। যে সমস্ত সংস্থাগুলো এইসব আশ্রয়হীন মানুষদের আবাসন সমস্যা নিয়ে কাজ করে তার মধ্যে নিউ স্টোরি ফাউনডেশন অন্যতম। তারা অনেক আগে থেকেই এই গৃহহীন মানুষগুলোকে বাড়ি তৈরি করতে সহায়তা করে আসছে, সেই সাথে তারা খুজছিলেন কিভাবে স্বল্প খরচে এই সমস্ত আশ্রয়হীন বিপদে থাকা পরিবারগুলোকে আরো বেশি সংখ্যায় সাহায্য করা যায়। এই চিন্তাভাবনা থেকে থ্রিডি প্রিন্টারে তৈরি বাড়ি দিয়ে শুরু হয়েছে বিশ্বের প্রথম আবাসন প্রকল্প।
প্রকল্প বাস্তবায়ন

একই চিন্তাভাবনা নিয়ে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান আচেলে (ÉCHALE) ও নির্মাণ প্রযুক্তি সংস্থা আইকন (ICON) একত্রিত হয়ে মেক্সিকোর তাবাস্কোতে একটি প্রকল্প শুরু করেছে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য আবাসন সমস্যায় থাকা ৫০ টি পরিবারকে স্বল্প খরচে আবাসন তৈরি করে দেওয়া। তবে এই প্রকল্পটি অন্যান্য আর সব প্রকল্প থেকে আলাদা, কারন এই প্রকল্পের বাড়িগুলি তৈরি হবে কম্পিউটার নিয়ন্ত্রীত বড় একটি থ্রিডি প্রিন্টিং মেশিনে। আর এই প্রকল্পের মাধ্যমেই বাস্তবায়ন হবে থ্রিডি প্রিন্টারে তৈরি বিশ্বের প্রথম মহল্লা ।
থ্রিডি প্রিন্টারে তৈরি বাড়ি; ব্যবহৃত প্রযুক্তি

থ্রিডি প্রিন্টারে তৈরি বাড়ি বর্তমানে বিশ্বের সব থেকে অধিক আলোচিত বিষয়। সাধারণ প্রিন্টারে ডকুমেন্ট প্রিন্ট আর থ্রিডি প্রিন্টারে বাড়ি প্রিন্ট মুলত একই প্রযুক্তি অনুসরণ করা হয়। পাথ্যর্ক্য শুধু প্রগ্রাম এবং প্রিন্টারে, থ্রিডি মডেলিং প্রোগ্রামে তৈরি করা ডিজাইন অনুযায়ী প্রকল্পের বড়িগুলির বিভিন্ন অংশ প্রিন্ট করবে প্রায় ৩৩ ফুট দৈর্ঘের একটি বিশাল আকারের প্রিন্টার যার নাম ভলকান-২।
আইকন কোম্পানির ভলকান-২ প্রিন্টারটি যে কোন প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করে কাজ করতে পারে। কারন উন্মুক্ত স্থানে বিরুপ আবহাওযাতে এই প্রকল্পটি সকলের জন্য ছিলো একটি চ্যালেঞ্জ। প্রিন্টারের মাধ্যমে স্তরে স্তরে কয়েকটি সেশনের মাধ্যমে বাড়ির কাঠামোটি তৈরি করা হয় সেখানে সময় লাগে প্রায় ২৪ ঘন্টা। কাঠামোটি প্রিন্ট করা হয়ে গেলে পরে ছাদ, জানালা এবং দরজা যুক্ত করে বাড়িগুলিকে বসবাসযোগ্য করা হয়।

৫০০ বর্গফুটের এই সুন্দর বড়িগুলিতে রয়েছে দুটি বেডরুম, একটি বাথরুম, কম্বাইন্ড কিচেন সহ লিভিংরুম আর বাইরে একটি ছোট্ট বারান্দা। কোন জামানত এবং সুদ ছাড়াই সাত বছরের মাসিক ৪০০ মেক্সিকান পেসো (প্রায় ২০ মার্কিন ডলার) কিস্তিতে বড়িগুলিতে বসবাস শুরু করতে পারছেন বাসিন্দারা

নিউ স্টোরি এই মুহুর্তে বাড়ির প্রকৃত নির্মাণ ব্যয় প্রকাশ করেনি তবে তরা আশা করছে প্রকল্পটি এগিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে এবং প্রকল্প ব্যয় ও হ্রাস পাবে। তারা আশা করছেন সামনে বছরের মধ্যে প্রকল্পের সব কাজ সম্পূর্ন হবে।