মেডিকেল ইমেজিং ইতিহাসে রঞ্জন-রশ্মি (X-ray) আবিষ্কারের কাহিনী পুরনো একটা ব্যাপার (Wilhelm Conrad Roentgen-১৮৯৫) হলেও এর বহুমাত্রিক প্রয়োগ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্লেন এক্স-রে (Plain X-ray) থেকে শুরু করে, কন্ট্রাস্ট এক্স-রে (Single contrast, Double contrast), সিটি স্ক্যান (plain CT, Contrast CT, Spiral CT,3-D CT reconstruction, Ultrafast CT), পিইটি সিটি (PET-CT) ইত্যাদি অনেক ক্ষেত্রেই এক্স-রের ব্যবহার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবধরনের এঞ্জিওগ্রাম, প্রচলিত (Conventional angiogram), সিটি এঞ্জিওগ্রাম (CT angiogram) মূলত এক্স-রে নির্ভর পরীক্ষা।
এক্স-রে এর পরে সবচাইতে যেটি ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটি হচ্ছে অতি-কম্পাঙ্কের শব্দ (Ultrasound), এটা এখন ঘরে ঘরে পরিচিত একটি পরীক্ষা। আল্ট্রা-সাউন্ড পরীক্ষা শুধু পেটের রোগ নির্ণয় বা রোগ চিকিৎসায় সীমাবদ্ধ নেই, হার্টের পরীক্ষা-Echocardiography (2-D, M-mode, Doppler study, Color Doppler study), রক্ত-নালীর ভিতরকার আল্ট্রাসাউন্ড (IVUS-Intravascular ultrasound), খাদ্যনালী, শ্বাসনালীর আল্ট্রাসাউন্ড (Intraluminal ultrasound), কনট্রাস্ট আল্ট্রাসাউন্ড ইত্যাদি নানাভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
এম আর আই (MRI) স্ক্যানের ক্ষেত্রে পরমাণুগুলোর চৌম্বকশক্তিকে বিভিন্নভাবে পরিবর্তিত করে ছবি তুলে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। গাডোলিনিয়াম জাতীয় দ্রব্য ব্যবহার করে ব্রেন, স্পাইনাল কর্ড, রক্তনালীর ছবি কোন কনট্রাস্ট ছাড়াই তোলা যায়। তেজস্ক্রিয় পরমাণুর তেজস্ক্রিয়তা ব্যবহার করে শরীরে ঢোকানোর পর বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ত্রুটিবিচ্যুতি এবং কার্জকারিতা পরীক্ষা করা যায়। এই পরীক্ষাগুলোকে রেডিওসিন্টিগ্রাফী (Radioscintigraphy) বলা হয়ে থাকে।
কোন কোন পরমাণু থেকে পজিট্রন নির্গত হয় যেমন ফ্লুরোডক্সাইগ্লুকোজ (FDG, Flurodeoxyglucose)। শরীরের ভিতর এফডিজি প্রবেশ করানোর পর যেসব টিস্যুতে বিপাক প্রক্রিয়া বেশী সেখানে এফডিজি জমা হয় এবং বেশী মাত্রাই ব্যবহৃত হয়, ফলে সেখান থেকে বেশী মাত্রায় পজিট্রন নির্গত হতে থাকে যা বিশেষ ধরনের ডিটেক্টরের মাধ্যমে নির্ণয় করা যায়।
ক্যান্সার কোষে বিপাক প্রক্রিয়া বেশী থাকায়, পিইটি স্ক্যান (PET- Positron emission tomography) করে লুকিয়ে থাকা টিউমার সনাক্ত করা যায়। পিইটি স্ক্যানের সাথে সিটি যোগ করলে পিইটি-সিটি (PET-CT) হয়, কম্পিউটার সফটওয়্যার এ-দুটোকে একত্রিত করে দিতে পারে, যা দিয়ে অঙ্গের ত্রুটিবিচ্যুতি সনাক্ত করার সাথে সাথে এর কার্যক্ষমতাও নিরূপণ করা যায়।
বর্তমানে ব্যবহৃত মেডিকেল ইমেজিং
শুধুমাত্র রোগ নির্ণয়ে নয়, রোগের চিকিৎসাতেও ইমেজিং গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা রাখে। যেমন, করোনারী এঞ্জিওগ্রাম শুধুমাত্র হার্টের রক্তনালীর রোগ নির্ণয়েই ব্যবহৃত হয়না, স্টেন্ট (Stent) পরিয়ে ব্লক (Block) সারাতেও এটি কাজে লাগে।
আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় রোগ নির্ণয়ে মেডিক্যাল ইমেজিং টেকনিক যেগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে সেগুলোর সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে।
সিটি স্ক্যান (CT Scan)
সিটি স্ক্যান (CT Scan) সম্বন্ধে বুঝতে গেলে প্রথমে বুঝতে হবে টোমোগ্রাফি কি জিনিষ। সাধারন এক্স-রে, যেমন বুকের এক্স-রেতে আমরা পুরো বুকের ছবিটাই দেখতে পাই। চোখ দিয়ে দেখে আমরা ঘনত্ব অনুযায়ী হাড়, তরল, লাংসের বাতাস, সফট টিস্যু ইত্যাদির ছবি আলাদা করতে পারি। সিটি স্ক্যানে সাদা এবং কালোর মধ্যেকার অনেকগুলি ধুসর (Grey zone) মাত্রা আলাদা করে বুঝতে পারা যায়।
টোমোগ্রাফীতে ছবি নেওয়ার সময় বিভিন্ন স্লাইস বা স্তরে বিভক্ত করা হয়, প্রত্যেক স্তরে ছবি নেওয়ার সময় আশেপাশের স্তরের ছবিগুলোকে অস্পষ্ট করে তোলা হয়, যাতে পরীক্ষাধীন স্তরের ছবিটা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ছবিগুলোর বিভিন্ন ভাগকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভাগ করে পরে কম্পিউটারের সাহায্যে পুনর্গঠন করে ত্রি-মাত্রিক প্রতিচ্ছবি তৈরী করা যায়।
এক্স-রে ব্যবহার যেখানে নিষেধ, যেমন- সন্তান-সম্ভবা মহিলা, সেখানে সিটি স্ক্যান করাও নিষেধ। কনট্রাস্ট সিটি করার সময় যে রঞ্জক পদার্থ (Contrast Dye) ব্যবহার করা হয়, কিডনী রোগ থাকলে তা ব্যবহার করা নিষেধ বিধায়, সেক্ষত্রে সিটি স্ক্যান বাদ দিয়ে, এম আর আই, আল্ট্রাসাউন্ড ইত্যাদি ব্যাবহার করা হয়। আল্ট্রাফাস্ট সিটিতে হার্টের করোনারী আর্টারীর ছবি পর্যন্ত দেখা যায়। রক্তনালীর ছবি তোলার সময় এখানে কনট্রাস্ট ডাই ব্যবহার করতে হয়।
এম আর আই স্ক্যান (MRI Scan)
একটা হাইড্রোজেন পরমাণুতে একটা ইলেকট্রন এবং একটা প্রোটোন থাকে। এরা যথাক্রমে নিগেটিভ এবং পজিটিভ চার্জ বহন করে। প্রত্যেকটা পরমাণু একটা ক্ষুদ্র ম্যাগনেট বা চুম্বকের মত কাজ করে। মানুষের শরীরের প্রত্যেক টিস্যুর ভিতর পানি রয়েছে এবং পানিতে রয়েছে হাইড্রোজেন পরমাণু এবং এই প্রত্যেক পরমাণুই একেকটা চুম্বক হিসাবে কাজ করে। পানির পরিমানের উপর এই চুম্বক শক্তি নির্ভর করে, স্বাভাবিক টিস্যু আর টিউমার টিস্যুর ভিতরে পানির পরিমান অনুযায়ী চৌম্বক ক্ষেত্রের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।
চুম্বক ক্ষেত্রকে যদি অন্য একটি শক্তিশালী চুম্বক ক্ষেত্র, অথবা রেডিওফ্রীকোয়েন্সি উদ্দীপনা দিয়ে আলোড়িত করা হয়, তাহলে আলোড়নের সময় একধরনের প্রতিচ্ছবি দিবে, আবার আলোড়ন শেষ হয়ে গেলে ভিন্ন প্রতিচ্ছবি দেবে। সব টিস্যু একইভাবে আলোড়িত হয়না, টিউমার এবং স্বাভাবিক টিস্যুর ভিতরও পার্থক্য থাকে, এই পার্থক্যকে কাজে লাগিয়ে দুই ধরনের ইমেজ তৈরী করা হয়, যেটা রোগ নির্ণয় করতে সাহায্য করে।
শরীরে কোন চুম্বকীয় পদার্থের তৈরী ইমপ্ল্যান্ট যেমন পেসমেকার (Pacemaker), এনিউরিজম ক্লিপ (Aneurysm clip) ইত্যাদি থাকলে, এম আর আই করা যায়না। ইদানীং এম আর আই সহনীয় পেসমেকার তৈরী করা হচ্ছে, তবে এগুলো ব্যয়বহুল। এম আর আই দিয়ে কনট্রাস্ট ছাড়াই রক্তনালীর ছবি তোলা যায়, যেটাকে এম আর এ (MRA- Magnetic resonance angiogram) বলে।
হার্টের পরীক্ষার ক্ষেত্রে সিটি এবং এম আর আই ইকোকারডিওগ্রাফীর চেয়ে ক্ষেত্রবিশেষে বেশী তথ্য সরবরাহ করে থাকে। বিশেষকরে হার্টের ডানদিক থেকে উৎপন্ন ধমনীর ত্রুটি নির্ণয়ে এটা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। তবে এম আর আই স্ক্যানে সিটি স্ক্যানের থেকে বেশী সময় লাগে।
রেডিওনিউক্লাইড স্ক্যান (Radionuclide (Isotope) Scan)
চিকিৎসাবিজ্ঞানে যেসব তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় তা এমন ধরনের আইসোটোপ যা স্বল্পস্থায়ী (Metastable) এবং এর বিকিরনের ফলে গামা রশ্মি উৎপাদিত হয়। এই আইসোটোপ এককভাবে অথবা অন্য পদার্থের সাথে সংযোজিত করে খুব স্বল্পমাত্রায় শরীরে প্রবেশ করানো হয় এবং বিকিরীত রশ্মি গামা ক্যামেরার সাহায্যে রেকর্ড করা হয়। একেক আইসোটোপের একেক ধরনের টিস্যুর সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার প্রবনতা থাকে। ঐসব টিস্যুর রক্তসরবরাহ, কার্যক্ষমতার উপর নির্ভর করে কতটুকু আইসোটোপ সেখানে সংযুক্ত হবে।
এইসব ফ্যাক্টর অনুযায়ী নানান ধরনের প্রতিচ্ছবি তৈরী হয় যা বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ে এবং রোগ নিরাময়ে কাজে লাগে। ছবি গ্রাফিক আকারের হতে পারে, দ্বি-মাত্রিক, ত্রি-মাত্রিক এমনকি সিনে ফিল্মের সাহায্যে চতুর্মাত্রিক (4 Dimensional, 4D) ছবি তৈরী হতে পারে। এর ফলে বিভিন্ন অঙ্গের গঠন যেমন যাচাই করা যায়, তেমনিভাবে এর কর্মক্ষমতাও যাচাই করা যায়। থাইরয়েড, ব্রেস্ট, অস্থি, মগজ, কিডনী, হার্ট ইত্যাদি বিভিন্ন অঙ্গ এই স্ক্যানের মাধ্যমে পরীক্ষা করা যায়।
হার্টের পেশীতে রক্ত চলাচলের মাত্রা নির্ধারনে এর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ণ। যেখানে করোনারী এঞ্জিওগ্রামের মাধ্যমে রক্ত চলাচলের ব্যাপারে সঠিক সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়না, সেখানে মায়োকার্ডিয়াল পারফিউশন স্ক্যান (MPI- Myocardial perfusion imaging) ব্যবহার করা হয়। স্পেক্ট (SPECT- Single photon emission computed tomography), অথবা পিইটি স্ক্যানের (PET- Positron emission tomography) মাধ্যমে এই পরীক্ষা করা হয়।
Technetium (99mTc) sestamibi and 99mTc tetrofosmin, Thallium 201 ইত্যাদি আইসোটোপ এইসব স্ক্যান করতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে হার্ট অ্যাটাকের অব্যবহিত পরেই, হার্ট ফেইলিওর, ছন্দপতন (Arrhythmia), অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ, এওরটিক ভাল্ভ সরু হয়ে যাওয়া ইত্যাদি থাকলে এধরনের পরীক্ষা করার আগে যথেষ্ট সাবধান হতে হয়।
আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা (Ultrasound scan)
অতিকম্পাঙ্কের শব্দ শরীরের অভ্যন্তরে পাঠিয়ে দিয়ে প্রতিফলিত শব্দ ফিরে আসার পর তাকে বিশ্লেষণ করে প্রতিচ্ছবি তৈরী করা হয়। ইকোকার্ডিওগ্রাফির ক্ষেত্রে এই প্রতিচ্ছবি রৈখিক (Linear, 1-D, M-mode), দ্বি-মাত্রিক (2-D, two dimensional), ত্রি-মাত্রিক (3-D, Three dimensional), হার্টের কর্মতৎপরতা দেখার জন্য চতুর্মাত্রিক (4-D, four dimensional) হতে পারে। শক্ত বস্তু থেকে শব্দ পুরোটাই প্রতিফলিত হয়ে আসে, যার ফলে শক্ত বস্তুর পিছনে প্রতিফলনের কোন চিহ্ন থাকে না (Acoustic shadow)।
আবার তরল পদার্থ কোন সিস্টের আকৃতি ধারন করে থাকলে, সামনের আর পিছনের দেওয়াল থেকে প্রতিফলিত তরঙ্গ একত্রিত হয়ে উচ্চনিনাদের জন্ম দেয় (Acoustic enhancement)। বিভিন্ন রোগ-নির্ণয় এবং এর চিকিৎসায় আলট্রাসাউন্ড একটা বহুল ব্যবহৃত পরীক্ষা। বাচ্চাদের মাথার খুলি শক্ত হয়ে যাবার আগে আল্ট্রা সাউন্ডের মাধ্যমে মগজের জন্মগত ত্রুটিও সনাক্ত করা যায়।
আল্ট্রাসাউন্ড গাইডের মাধ্যমে শরীরের অভ্যন্তরস্থ বিভিন্ন অংগ থেকে বায়োপ্সি (Biopsy) নেওয়া যায়, জমে থাকা পুঁজ, রক্ত, তরল পদার্থ নিকাশ করা যায়। আল্ট্রাসাউন্ড দিয়ে বিভিন্ন অঙ্গের পাথর ভেঙ্গে ফেলা যায়, টিউমারকে গুড়ো করে ছোট্ট করে কেটে বের করে নিয়ে আসা যায়। এর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া এখনও পাওয়া যায়নি, স্বল্পখরচ এবং খুব সহজে ব্যবহার উপযোগী হওয়ার কারনে এর ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে।
ডপলার আল্ট্রাসাউন্ড (Doppler Ultrasound)
কোন চলন্ত বস্তুর উপর শব্দ বা আলো প্রক্ষেপণ করলে প্রতিফলিত শব্দ বা আলোর কম্পাঙ্ক পরিবর্তিত (Doppler shift) হয়। যদি চলন্ত বস্তুর গতি প্রক্ষেপিত শব্দ বা আলোর দিকে হয়, তবে কম্পাঙ্ক বাড়বে, আর যদি বিপরীত দিকে হয় তবে কম্পাঙ্ক কমবে। বিভিন্ন রক্তসংবাহী অঙ্গ, যেমন হার্ট, রক্তনালীর ভিতর দিয়ে প্রবাহিত রক্তের গতিবেগ এই বৈশিষ্টকে ব্যবহার করে নিরূপণ করা যায়। রক্তনালী অথবা ভাল্ভ কিছুটা সরু হয়ে গেলে রক্তের প্রবাহের গতি বেড়ে যাবে, একেবারে বন্ধ হয়ে গেলে কোন প্রবাহ থাকবে না, উল্টাদিকে প্রবাহিত হলে, উল্টাদিকের গতিবেগ বেড়ে যাবে।
কৃত্রিম হার্ট ভাল্ভ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে: আবিষ্কারের কাহিনী-কৃত্রিম হার্ট ভাল্ভ
এভাবেই রক্তনালী বা ভাল্ভ সরু হয়ে যাওয়া, ভাল্ভ অক্ষম হয়ে উল্টাদিকে প্রবাহিত হওয়া (Valve incompetence or regurgitation) ইত্যাদি নিরূপনে ডপলার আল্ট্রাসাউন্ড ব্যবহার করা হয়। একটা প্রোবের (Probe) মাধ্যমে আল্ট্রাসাউন্ড পাঠিয়ে প্রতিফলিত শব্দকে বিশ্লেষণ করে কম্পিউটারের মাধ্যমে প্রতিচ্ছবি নির্মাণ করা হয়। প্রতিচ্ছবি নির্মাণে কোন কোন সময় ছবিতে রঙ ব্যবহার করা হয়।
যদি প্রবাহ প্রোবের দিকে হয় তখন লাল রঙ দেখা যায়, আর প্রবাহ প্রোব থেকে দুরে সরে গেলে নীল রঙ এর হয়, প্রবাহ ঘূর্ণির আকারে অথবা এলোমেলো হলে লাল, নীল, হলুদ, সবুজ রঙ এর মিশ্রণ হিসাবে (Mosaic flow) উপস্থাপিত হয়। এই পদ্ধতিকে কালার ডপলার স্টাডি (Color Doppler study) বলা হয়। হার্টের দেওয়ালের নড়াচড়াকেও ডপলার দিয়ে বিশ্লেষণ করা যায়, এটাকে টিস্যু ডপলার বলে।
ভিওস ওয়ার্ক (ViosWork)
মেডিকেল ইমেজিং এ নতুন যুক্ত হওয়া একটি প্রযুক্তি ভিওস ওয়ার্ক (ViosWork)। এটা এক ধরনের কার্ডিয়াক এম আর আই, যা খুব অল্প সময়ের মধ্যে হার্টের ত্রিমাত্রিক এনাটমী এবং প্রবাহের চিত্র দিতে পারে, এক্ষেত্রে সময় লাগে মাত্র ১০ মিনিট। তাই ইমার্জেন্সী সময়ে ভিওস ওয়ার্কের মাধ্যমে খুব দ্রুত তথ্যাদি পাওয়া সম্ভব।
ইনফ্রারেড থারমোগ্রাফী (Infrared Thermography)
ইনফ্রারেড থারমোগ্রাফী (Infrared Thermography) পদ্ধতি ব্যবহার করে প্রতিচ্ছবি তৈরী করা যায়। যেসব টিস্যুতে বিপাক প্রক্রিয়া বেশী সেখান থেকে নির্গত তাপমাত্রা বেশী থাকে যেমন ক্যান্সার অথবা প্রদাহ আক্রান্ত টিস্যু। ইনফ্রারেড থারমোগ্রাফীর মাধ্যমে সেসব আক্রান্ত টিস্যু নির্ণয় করা সম্ভব।
ক্যাপস্যুল এন্ডোস্কোপি (Capsule endoscopy)
ছোট্ট একটা ক্যাপসুল আকৃতির ডিভাইসের ভিতর লাইট সোর্স এবং ক্যামেরা লাগানো থাকে। এটা গিলে খাবার পর ক্ষুদ্রান্ত (Small Intestine) থেকে অসংখ্য ছবি পাঠাতে থাকে যা রোগীর শরীরে লাগানো রেকর্ডারে লিপিবদ্ধ হতে থাকে। পরে এইগুলিকে বিশ্লেষণ করে রোগ নির্ণয় করা যায়।
নতুন মেডিকেল ইমেজিং টেকনিক
একুশ শতকের চিকিৎসা বিজ্ঞানের সাথে যুক্ত হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তি। রোগ নির্ণয়কে আরো নিখুত ও সহজ করতে প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন ডিভাইস ও টেকনিক। তারই ধারাবাহিকতায় মেডিকেল ইমেজিং -এ নতুন যুক্ত হয়েছে এফএফআর সিটি (FFR-CT), চতুর্মাত্রিক সিএমআর (4-D CMR)। চিকিৎসা বিজ্ঞানে ইমেজিং একটি অপরিহার্য অংশ, কারন ইমেজিং শুধুমাত্র স্থির চিত্রই (Static film) দেয়না, এটা চলমান চিত্রও (Cine film) দিয়ে থাকে, যার ফলে শরীরের গাঠনিক ত্রুটি বিচ্যুতির নিরূপণের সাথে সাথে পরীক্ষাধীন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কার্যকারিতাও নিরূপন করা যায়।
ভবিষ্যতের মেডিকেল ইমেজিং টেকনিক
বিভিন্ন ধরনের ন্যানো পার্টিকেল কনট্রাস্ট হিসাবে ব্যবহার করা হবে ভবিষ্যতে যাতে ব্যবহৃত রঞ্জক পদার্থ থেকে কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া তৈরী না হয়। বিভিন্ন ধরনের মেডিকেল ইমেজিং একই সাথে ব্যবহার করে আরও বেশী নিখুত এবং স্পষ্ট প্রতিচ্ছবি তৈরী করা যাবে, যাতে রোগ নির্ণয় এবং রোগ প্রতিকার সহজতর হয়। সেই সাথে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ব্যবহার ইমেজ প্রসেসিংকে (Image processing) আরও দ্রুততর করবে।
একটা সময় আসবে যখন বিভিন্ন সেন্টারে শুধু ক্যামেরা থাকবে ইমেজ সংগ্রহ করার জন্য তারপর ক্লাউড বেজড নেটওয়ার্কের ব্যবহার করে কেন্দ্রীয়ভাবে ইমেজ প্রসেসিং হবে। ক্ষতিকর রশ্মির হাত থেকে বাঁচার জন্য যোগ হবে রোবোটিক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার এখন সময়ের দবী। রেডিওমিক্স (Radiomics) ভবিষ্যতের ডাটা প্রসেসিং এবং মেশিন নির্ভর শিক্ষাই অবদান রাখবে, এতে কোন সন্দেহ নেই।