‘The Social Dilemma’ (সোশ্যাল ডিলেমা) বা সামাজিক সংকট/উভয়সংকট সম্প্রতি নেটফ্লিক্সে (Netflix) রিলিজ হওয়া জেফ অরলোস্কি’র (Jeff Orlowski) ডকুমেন্টারি ফিল্ম। যারা মুলত সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করেন তাদের ভেবে দেখার সময় হয়েছে যে, কতটুকু ব্যবহার করবেন এবং কিভাবে ব্যবহার করবেন।
সান ড্যান্স এর প্রযোজনায় The Social Dilemma তে দেখানো হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো কিভাবে আমাদের মনোভাব ও আচরণের উপর প্রভাব বিস্তার করতে হিউম্যান সাইন্সকে কাজে লাগাচ্ছে। কিভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব আমাদের স্বাভাবিক জীবন ধারণকে আস্তে আস্তে পবিরবর্তন করছে।
বিলিয়ন ডলার আয়ের জন্য সোশ্যাল ডিলেমা তৈরি করা হচ্ছে পরিকল্পিতভাবে। আমরা সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করছি এ কথাটি যতটুকু সত্যি তার থেকে বেশি সত্য প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো আমাদেরকে এবং আমাদের ব্যক্তিগত তথ্যগুলো ব্যবহার করছে পরিকল্পিতভাবে! কথাটি শুনে যদি আপনার মনের মধ্যে খুব বেশি অস্বস্তি তৈরি হয় তবে তা আপনার জন্যই মঙ্গলজনক।
নেটফ্লিক্স থেকে আরোঃ
‘No Time to Die (2020)’ বাংলা ট্রেইলার! 007 সিরিজের নতুন ধামাকা
নেটফ্লিক্সে সর্বোচ্চ আয় করা ১০ টি চলচ্চিত্রের তালিকা
সোশ্যাল ডিলেমা শুরুটা যেভাবে
বিগত বছরগুলোতে সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপসের (Application) আকর্ষনীয় ও অফুরন্ত কনটেন্ট আমাদের দৈনন্দিন জীবনের সাথে আস্তে আস্তে একীভূত হয়েছে। যেমন, ফেসবুক আমাদেরকে পরিবার এবং বিশ্বজুড়ে বন্ধুবান্ধবের সাথে সংযুক্ত রেখেছে, টুইটার মানুষের অনুভুতিগুলো শেয়ার করার সুযোগ করে দিয়েছে, উবার আমাদের দরজায় খাবার এবং যাত্রীসেবা পৌছে দিচ্ছে শুধুমাত্র একটি আঙ্গুলের স্পর্শে। এটা প্রযুক্তি এবং সোশ্যাল মিডিয়ার ভাল এবং অপরিহার্য একটি দিক তবে এর উল্টোদিক বা ব্যাকএন্ডের চিত্রটা খুব বেশি ভিন্ন যা সহজ চোখে বোঝা খুবই জটিল।
মানসিক স্বাস্থ্যের উপরে অনলাইন প্রযুক্তি ও সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব এবং মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য সংগ্রহের বিতর্কিত বিষয়গুলো নিয়ে অনেক আলোচনা সমালোচনা হয়েছে, এবং বড় কোম্পানিগুলো সবসময়ই Software bug এর কারন দেখিয়ে এড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে। তবে এই সময়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে মানুষকে আরও বেশি ব্যস্ত রাখতে হিউম্যান সাইন্সকে কাজে লাগানো হচ্ছে অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করতে।
আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য বিশ্লেষন করে নিউজ ফিড সাজানো হচ্ছে প্রতিদিন, প্রদর্শন করা হচেছ বিজ্ঞাপন! আর এগুলো কোন Software bug বা ক্রটি নয়, এটা পরিকল্পিত। প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর জন্য Social Dilemma তৈরি, বিলিয়ন ডলার মুনাফা লাভের একটি পন্থা মাত্র। যা এর আগে এভাবে কখনও উপস্থাপিত হয়নি।
সোশ্যাল ডিলেমা প্রযুক্তির তৈরি বিলিয়ন ডলারের ফাঁদ
The Social Dilemma ডকুমেন্টারিতে গুগল, ফেসবুক এর মত বড় প্রতিষ্ঠানের সেইসব প্রাক্তন প্রযুক্তিবিদেরা ক্যামেরা সাক্ষাত্কার দিয়েছেন, যাদের হাত দিয়ে তৈরি হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার পরিকল্পিত এবং আকর্ষনীয় অ্যাপ্লিকেশনগুলো। Social Dilemma তৈরিতে এলগোরিদমকে কিভাবে ব্যবহার করা হয়েছে তা বোঝাতে একটি কাল্পনিক চিত্রনাট্যের মাঝে তাদের সাক্ষাৎকারগুলো খন্ড খন্ড ভাবে জুড়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের সাক্ষাৎকারে যে বিষযগুলো উঠে এসেছে তা খুবই শঙ্কার।
বর্তমানে যে সমস্ত অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহৃত হচ্ছে তার সবগুলোই বিশেষভাবে ডিজাইন করা, যাতে ব্যবহারকারীকে আরো বেশি সময় ধরে অ্যাপ্লিকেশন সাথে বা সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে সংযুক্ত রাখা যায়। ফলে ক্রমাগত এগুলো ব্যবহারে মানুষের আচরণ এবং অভ্যাস খুব আস্তে আস্তে পরিবর্তিত হচ্ছে যা সমাজে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা তৈরিতে প্রভাব রাখছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে-
তারা কেন এটি চায়?
এবং আমরা যদি ক্রমাগত অনলাইন প্রযুক্তির সাথে সংযুক্ত থাকি তবে তাদের লাভটা কি?
উত্তর একটাই, মুনাফা! বিলিয়ন ডলারের মুনাফা!
অনলাইনে আপনি যদি কোন পণ্যের জন্য অর্থ না দিয়ে থাকেন – তবে আপনি নিজেই পণ্য। বিষয়টি এভাবে ব্যাক্ষা করা যায়, Facebook, Twitter, Google, Instagram, Reddit এর মত সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ্লিকেশনগুলো আমরা ব্যবহার করছি কোনরকম খরচ না করে, তবে এর অর্থ এই নয় যে আমরা কোন দাম দিচ্ছি না, অনলাইন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের প্রতিদিনের অনলাইন এক্টিভিটি থেকেই আয় করে নিচ্ছে বিলিয়ন ডলার।
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বিশেষভাবে তৈরি অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে অনলাইনে আমাদের প্রতিদিনের প্রতিটি পদক্ষেপের তথ্য সংগ্রহ করে, যেমন বন্ধুর ছবিতে আমাদের দেওয়া লাইক, ইমোজি, স্ট্যটাস, কোথায় কোথায় লগইন করছি, কার কার সাথে কথা বলছি সবই। এই তথ্যগুলো পর্যবেক্ষণ করে প্রত্যেকের জন্য আলাদা আলাদ প্রতিচ্ছবি তৈরি করা হয় যা থেকে বোঝা যায় আমাদের পছন্দ-অপছন্দ, কী আমাদের কষ্ট এবং ভাললাগা তৈরি করে, কোনটাতে আমারা রেগে যাই।
এবার আমাদের বৈশিষ্ঠ অনুযায়ী অ্যালগরিদম সেট করা হয়, যাতে ঠিক করা থাকে আমাদের নিউজ ফিডে পরবর্তি সময়গুলোতে কখন কি থাকবে। অর্থাৎ সোশ্যাল মিডিয়া তথা অনলাইনে আমরা যা দেখি তার সবই আমাদেরকে দেখানো হয় আমাদের বৈশিষ্ঠ অনুযায়ী। এভাবেই প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের ব্যক্তিগত তথ্য ব্যবহার করে বিজ্ঞাপন বাণিজ্যের মাধ্যমে আয় করে নিচ্ছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার!
একটু ভেবে দেখুন তো..
সোশ্যাল ডিলেমা ডকুমেন্টারিতে একটি বিষয় জোড়ালো ভাবে উঠে এসেছে যে, মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ার এই পরিকল্পনার সম্পর্কে অবহিত থাকুক বা না থাকুক, অনলাইন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এবং সোশ্যাল মিডিয়া নেটওয়ার্কগুলি আমাদের সমাজ এবং ব্যক্তিস্বাধীনতার জন্য হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে দিনে দিনে।
বাস্তব উদাহরণ পেতে একটু স্মরণ করে দেখুনতো, এই আর্টিকেলটি পড়তে আপনি কতগুলো বিজ্ঞাপন দেখেছেন! এবং কি ধরনের বিজ্ঞাপন দেখেছেন! আপনার নিউজ ফিডে আজ কি ছিলো এবং কেনো ছিলো?
আরো পড়ুন.. |
---|
আয়ু বৃদ্ধি ও অমরত্বের সন্ধানে বিজ্ঞান! ডিপফেক ভিডিও! কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার তৈরি অভিশপ্ত প্রযুক্তি |
তথ্যসূত্রঃ |
---|
www.nytimes.com www.digitalspy.com |