মেন্সট্রুয়াল কাপ (Menstrual Cup) ব্যবহারে নারীর দৈনন্দিন জীবনযাপন হবে আরো স্বাধীন, স্বাস্থ্যকর ও সংকোচহীন। কিভাবে? আসুন জেনে নেওয়া যাক ছোট্ট কিন্তু অনেক দরকারি এই পন্যটির ব্যবহার, সুবিধা ও অসুবিধা সহ বিস্তারিত।
প্রজনন স্বাস্থ্য এবং মাসিকের (Menstruation) সময়ে নিরাপদ ব্যবস্থাপনা পরিচ্ছনতা এটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে পিরিয়ড বা মাসিক চলাকলীন সময়ে পরিচ্ছন্নতা এবং স্বাস্থ্য ঝুঁকি সম্পর্কে আরো বেশি সচেতন হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।
প্রযুক্তির কল্যানে এবং প্রয়োজনের তাগিতে মেন্সট্রুয়াল কাপ নামটা ইতিমধ্যে এখন অনেকের কাছেই পরিচিত এবং এটার ব্যবহারও অনেকে শুরু করেছেন। কিন্তু আমাদের দেশে বেশিরভাগ নারীদেরই এখনও মেনস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহার সম্পর্কে কোন স্বচ্ছ ধারণা নেই।
আবার অনেকে ধারনা থাকলেও সংকোচ অথাবা ভয়ের কারনে এটা ব্যবহার থেকে দুরে থাকেন। মুক্তপ্রানের এই লেখাটি তাদের জন্য, যারা মাসিককালীন পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থাপনায় মেন্সট্রুয়াল কাপ কিভাবে কাজ করে, বা কিভাবে ব্যবহারের করতে হয় তা জানতে চান।
স্বাস্থ্য সংক্রান্ত আরো লেখা পড়ুনঃ
একবিংশ শতাব্দীর চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং…
একটোপিক প্রেগনেন্সি (Ectopic Pregnancy); দরকার বাড়তি সতর্কতা!
মেন্সট্রুয়াল কাপ কি ও কিভাবে কাজ করে
মেন্সট্রুয়াল কাপ মুলত মেডিকেল গ্রেডের সিলিকন দ্বারা তৈরি একটি সফট ফানেল বা কাপ, যার নীচের দিকে রয়েছে সরু ও ছোট একটি ডাঁট। নরম এই কাপটি কে ভাজ করে ভ্যাজাইনাল ক্যানাল বা যোনিপথে প্রবেশ করাতে হয়। যোনি পথে প্রবেশের পরে কাপটি নিজে থেকেই যোনিপথের মুখকে ভেতর থেকে বন্ধ করে দেয়।
এই কাপটি স্যানিটারি প্যাডের মত রক্ত শোষণ করেনা বরং এর খালি জায়গাটিতে রক্ত জমা হতে থাকে। স্বাভাবিক মাসিকের সময় মেন্সট্রুয়াল কাপ ছয় থেকে আট ঘণ্টা অনায়াসে ব্যবহার করা যায়। কাপগুলো ছোট, মাঝারি ও বড় এই তিনটি মাপে পাওয়া যায়, যা গড়ে ২৩ থেকে ৪২ মিলিলিটার রক্ত ধারণ করতে পারে।
কোন সাইজের মেন্সট্রুয়াল কাপ পড়বেন?
কোন সইজের মেন্সট্রুয়াল কাপ (Menstrual Cup) প্রয়োজন তা নারীর বয়স, ওজন, শারীরিক গড়ন ও সন্তান প্রসবের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বেছে নিতে হবে। যেমন সন্তানের জন্মদান করলে ভ্যাজাইনার গঠন পরিবর্তন হয়ে যায় বা ভেজাইনার পেশি শিথিল হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে কাপের সাইজ অবশ্যই বড় প্রয়োজন হবে।
আবার কিশোরী বা কম বয়সের নারীদের জন্য মেন্সট্রুয়াল কাপের মাপ অপেক্ষকৃত ছোট হবে এটাই স্বাভাবিক। বাজারে ছোট, মাঝারী ও বড় মিলিয়ে মোট চারটি সাইজের মেন্সট্রুয়াল কাপ পাওয়া যায়। সেগুলোর মধ্য থেকে আপনার সারভিক্স বা জরায়ু গ্রীবার গভীরতা জেনে মেনস্ট্রুয়াল কাপ সংগ্রহ করে ব্যবহার করুন।
যেমন, যদি সারভিক্স তুলনামূলক গভীর (হাই সারভিক্স) বা ভেতরে হলে বড় সাইজের মেন্সট্রুয়াল কাপ প্রয়োজন হবে, তেমনই সারভিক্স কিছুটা নীচের (লো সারভিক্স) দিকে হলে ছোট সাইজের কাপ পরা সুবিধাজনক। প্রথম প্রথম হয়তো কাপ পরতে অনভ্যস্ততা, অস্বস্থি ও ভয় কাজ করবে তবে দুই-তিন পিরিয়ড সাইকেল পরে এই সমস্যাগুলো এমনিতেই ঠিক হয়ে যায়।
মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা
মাসিক বা পিরিয়ডের সময় মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করা সব থেকে নিরাপদ ও আরামদায়ক হিসাবে বলে মনে করেন অধিকাংশ কর্মজীবি নারীরা, এছাড়াও যারা খেলাধুলা করেন বা বাইকিং বা হাইকিং এর নেশা আছে তাদের কাছে মেন্সট্রুয়াল কাপ একটি স্বাধীনতারই নাম। খুব বেশিদিন হয়নি তবে বাংলাদেশেও অনেকে এটি ব্যবহার শুরু করেছেন। আসুন জেনে নেওয়া যাক মেনস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধাগুলো
মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহারের সুবিধা
- সব বয়সের মেয়েরাই ব্যবহার করতে পারেন।
- কোনো কেমিক্যাল বা সিন্থেটিক উপকরণ না থাকায় এটির কোন পার্শ্বপতিক্রিয়া নাই।
- ব্যাকটেরিয়াঘটিত কোন জীবানু সংক্রমনের ঝুঁকি নেই। তবে স্টেরিলাইজ বা জীবাণুমুক্ত করতে হবে নির্দিষ্ট সময় পরপর।
- স্যানিটারি ন্যাপকিনের থেকে এটা সাশ্রয়ী। একটি মেন্সট্রুয়াল কাপ অনায়াসে ৮ থেকে ১০ বছর ব্যবহার করা যায়।
- এটা পরিবেশ বান্ধব একটি পন্য, ব্যবহারের পরে ফেলে দিলে এটা মটিতে খুব দ্রুত মিশে যায়।
- মসিক চলাকনীন সময়েও আপনি স্বাভাবিক সময়ের মত সব কাজ করতে পারবেন।
মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহারের অসুবিধা
- প্রথমবার ব্যবহারের সময় কাপটি পড়তে বা খুলতে সাধারনত সকলেইর একটু সমস্যা হয় যা পরে ঠিক হেয় যায়।
- জরায়ুতে যদি আগে থেকে কোনো ধরনের সমস্যা থেকে থাকে তবে এটা ব্যবহার না করাইটাই ভালো।
- পিরিয়ড ব্লাড মেন্সট্রুয়াল কাপে জমা থাকে, আর এটা নিজেকেই পরিষ্কার করতে হয়, এই কজটিতে আপনার যদি কোনো অস্বস্তি না হয় তবে কাপটি ব্যবহারে আর কোনো সমস্যাই নেই!
- মেনস্ট্রুয়াল কাপ যোনিপথে প্রবেশ করাতে হয় তাই অবিবাহিত মেয়েরা এটি ব্যবহার করতে ইতস্তত বোধ করতে পারেন।
মেনস্ট্রুয়াল কাপ ব্যবহারের আগে বিবেচ্য বিষয়
আপনার যদি ফাইব্রোয়েডস (Fibroids) বা জরায়ুতে কোন ইনফেকশন থেকে থাকে, সেক্ষেক্রে মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন ডাক্তাররা। আবার হেভি ফ্লো বা স্বাস্থ্যগত কোনো সমস্যা রয়েছে কিনা তাও বিবেচনায় রাখতে হবে।
মেনস্ট্রুয়াল কাপের ব্যবহার অবশ্যই নিরাপদ আরামদায়ক ও সাশ্রয়ী যার কারনে উন্নত দেশগুলোতে ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। তবে যদি মেন্সট্রুয়াল কাপ ব্যবহার করতে চান তবে ব্যবহার করার আগে একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে ভুলবেন না।
আর কাপ ব্যবহারের আগে অবশ্যই কাপের কোয়ালিটি, তৈরির উপাদান, মেডিক্যাল গ্রেড দেখে নিশ্চিত হয়ে তার পরে ব্যবহার করুন।
মেন্সট্রুয়াল কাপ সংরক্ষণ
প্রতিবার মসিক/পিরিয়ডের শেষে কাপটি ভাল করে গরম পানিতে ফুটিয়ে নিন। এরপর ভালভাবে শুকিয়ে শুকনো জীবানুমুক্ত জায়গাতে তুলে রাখুন। এবং এই কাজগুলো করতে অবশ্যই ভালভাবে হাত পরিষ্কার করে নিতে হবে। কারন বেশিরভাগ জীবানুর সংক্রমন হাতের মাধ্যমেই হয়ে থাকে।