“নন্দিত কথা সাহিত্যক হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যু হয়েছিল ক্যান্সারে ” এই কথাটিই আমরা সবাই জানি।
কিন্তু আমাদের প্রিয় লেখকের মৃত্যুর জন্য আসলেই দায়ী কে? ক্যান্সারের চিকিৎসার উন্নতি হলেও উানর মৃত্যুর আসল কারণ ছিল MRSA (Methicillin-resistant staphylococcus aureus) নামে এক প্রকার এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া বা সুপারবাগ।
পেনিসিলিন তখনও আবিষ্কার হয়নি, সে সময়টাতে প্রচুর পরিমাণে সালফা ড্রাগস ব্যাবহার হতো। কিন্তু ২য় বিশ্ব-যুদ্ধের সময় আস্তে আস্তে জীবাণুরা যখন সালফা ড্রাগস প্রতিরোধী হয়ে উঠতে লাগলো ঠিক তখনই আলেকজান্ডার ফ্লেমিংয়ের কল্যানে শুরু হলো পেনিসিলিন নামক এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার।
পেনিসিলিনের আবিষ্কারক আলেকজান্ডার ফ্লেমিং নোবেল প্রাইজ নেবার সময় পেনিসিলিনের অপব্যবহারে এর কার্জকারিতা হারানোর অশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। তার আশংকার কথাগুলো নিচে উল্লেখ করছিঃ
“Penicillin is to all intents and purposes non-poisonous so there is no need to worry about giving an overdose and poisoning the patient. There may be a danger, though, in underdosing. It is not difficult to make microbes resistant to penicillin in the laboratory by exposing them to concentrations not sufficient to kill them, and the same thing has occasionally happened in the body. The time may come when penicillin can be bought by anyone in the shops. Then there is the danger that the ignorant man may easily underdose himself and expose his microbes to non-lethal quantities of the drug making them resistant. Here is a hypothetical illustration. Mr. X. has a sore throat. He buys some penicillin and gives it himself and exposing his microbes to non-lethal quantities of the drug makes them resistant. Here is a hypothetical illustration. Mr. X. has a sore throat. He buys some penicillin and gives himself, not enough to kill the streptococci but enough to educate them to resist penicillin. He then infects his wife. Mrs. X gets pneumonia and is treated”
ভাইরাস সম্পর্কিত একটি বিস্তারিত আলোচনাঃ ভাইরাস! বিভিন্ন সময় মানব সভ্যতাকে থমকে দিয়েছে যে পরজীবী
সুপারবাগ তৈরিতে এন্টিবায়োটিক কিভাবে ভুমিকা রাখে?
এখন প্রশ্নটা হলো, অনুজীবগুলো একের পর এক এন্টিবায়োটিককে হার মানিয়ে কেন এবং কিভাবে “সুপারবাগ” বা এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে? এই “কেন” এর উত্তরটা খুবই সাধারন। দুনিয়ায় কোন কিছুই বসে বসে মার খেতে চায় না সেখানে এই অতি ছোট ছোট অনুজীবরাও এই নিয়মের বাইরে নয়।
আর যদি “কিভাবে” প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, এই অতি ক্ষুদ্র অনুজীবরা অতিদ্রুত তাদের বংশবৃদ্ধি করে। ফলে কয়েক ঘন্টায় তারা প্রজন্মের পর প্রজন্ম অনুজীব তৈরি করতে পারে। ফলে সহজেই এদের মিউটেশন হতে পারে। বেশির ভাগ মিউটেশন ক্ষতিকর অথবা কোন কাজের না হলেও মাঝেমধ্যে কিছু ভাগ্যবান ব্যাকটেরিয়া মিউটেশনের মাধ্যমে এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে যায়। আর এই এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়াকেই বলা হয় সুপারবাগ।
এন্টিবায়োটিকের প্রভাবে অন্যরা মারা গেলে এই ভাগ্যবান মিউটেড গুলো ফাঁকা মাঠে গোল দেয় অর্থাৎ খাদ্য ও বাসস্থানের জন্য কোন অন্য ব্যাকটিয়ার সাথে প্রতিযোগিতা ছাড়াই এরা যত খুশি ততো বিভাজিত হয়।
ফল স্বরুপ বিজ্ঞানী এবং ডাক্তারেদের মাথাব্যথার কারণ “সুপারবাগ” (এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটিয়া) “।
এদের কাছে মিউটেশন ছাড়াও আরো কিছু উপায় আছে যেমন, এক এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া তার জিন অন্য প্রজাতির ব্যাকটারিয়াকেও দিতে পারে। বলতে গেলে, কোন এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ডায়রিয়ার ব্যাকটেরিয়া (E. coli) সময় সুযোগ পেলে টাইফয়েডের জীবানুকে (Salmonella typhi) তার এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী জিন দিয়ে দিতে পারে।
মজার ব্যাপারটা হলো পৃথিবীতে বিভিন্ন স্থানে মানুষের সব কাজকর্মের বাইরে প্রাকৃতিকভাবেই কিছু এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী ব্যাকটেরিয়া থাকতে পারে। যেমন ২০০৮ সালে আবিষ্কৃত ভেনিজুয়েলার জঙ্গলে আধুনিক বিজ্ঞান ও চিকিৎসা সেবা থেকে দূরে বসবাস করা “ইয়ানোমামি” জনগোষ্ঠীর ভিতর থেকে পাওয়া এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী “Helicobacter pylori” (আলসারের জন্য দায়ী এরা)
অথবা ২০১৮ সালে আমেরিকার “Lechuguilla” গুহার ১৩০০ ফিট নিচ থেকে সংগ্রহ করা superbug, যে জায়গাটি সম্পূর্নরুপে মানুষে পদচারণা থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলো)। তবে এই ধরনের ব্যকটেরিয়ার সংখ্যা একেবারেই হাতেগোনা।
এসব সুপারবাগের পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হলো আমাদের অসচেতা এবং অসাবধানতা। আমরা সমান্য গা গরম হলেও মুড়ির মতো এন্টিবায়োটিক গিলি। ডাক্তারের দেওয়া এন্টিবায়োটিকের কোর্স কমপ্লিট করি না। এছাড়া দ্রুত রোগের কারণ নির্ণয়ের যেসকল উপায় রয়েছে সেগুলোর অপ্রতুলতাও কিছুটা দায়ী।
আসলে এন্টিবায়োটিকের কোর্স শুরু করার প্রথম দিকেই বেশির ভাগ ব্যাকটেরিয়া মারা যায়। আর যেগুলো মারা যায় না সেগুলো এমনিতেই শক্তিশালী। তখন কোর্স শেষ না করাতে ঐ শক্তিশালী ব্যাকটেরিয়াগুলো আরো শক্তিশালী হয়ে পরিবেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
আবার আজকাল বাজারে নকল ও ভেজাল ঔষধে ভরে গেছে। যেগুলোর ভিতর অতি সামান্য এন্টিবায়োটিক থাকে আর বাকি অংশ হয়ত আটার গুড়া। এতে ব্যাকটেরিয়া মরার বাদলে আস্তে আস্তে এন্টিবায়োটিকের সাথে খাপ খাইয়ে নেয়। আর ফার্মে পশুখাদ্যে এন্টিবায়োটিকের যত্রতত্র ব্যাবহারের কথা বাদই রাখলাম।
আরো পড়তে পারেন: স্কোপোলামিন (ডেভিলস ব্রিদ); বর্তমান সময়ের সবথেকে ভয়ংকর ড্রাগ!
সুপারবাগ কতটা ক্ষতিকর?
দিনদিন এন্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সুপারবাগ গুলো সত্যিই সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ক্যান্সার চিকিৎসার কেমোথেরাপি চলাকালে /ICU তে থাকা রোগীদের অনেকেই MRSA- এর মতো সুপারবাগ এর হাতে মারা যান।
টাইফয়েড, নিউমোনিয়া, অতিমাত্রায় ডায়রিয়ার মত রোগগুলো মারাত্মক হলেও কিছুদিন হাসাপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিলেই ভালো হয়ে যায়, তবে, আমাদের হাতে থাকা এন্টিবায়োটিক গুলো একই হারে কার্জকারিতা হারাতে থাকলে এই রোগগুলোই মধ্যেযুগের মতোই আবার মহামারী বাঁধতে পারে।
সেজন্য আমাদের সকলেই উচিত অন্তত এন্টিবায়োটিক ব্যাহারের ক্ষত্রে আরো সচেতন হওয়া। মনে রাখতে হবে মানুষ আসার অনেক আগে থেকেই এসব ব্যাকটেরিয়া পৃথিবীর বাসিন্দা। তাদের থেকে সামলে চলতে সচেতনতা আর সাবধানতার প্রয়োজন রয়েছে বৈকি।