সেন্টমার্টিন ভ্রমণ পর্যটকদের জন্য সব সময়ই অত্যন্ত আকর্ষনের। বর্তমানে দ্বীপে পর্যটকদের যাওয়া আসা আরো সহজ হওয়াতে দিন দিন বাড়ছে পর্যটকদের চাপ আর এ কারনে বিপন্ন হতে চলেছে এখানকার পরিবেশ ও প্রতিবেশ। পর্যটকের অসচেতনাতার কারনে দ্বীপের জীববৈচিত্রও আজ হুমকীর মুখে। এরই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ অধিদফতর থেকে নেওয়া হয়েছে কিছু পদক্ষেপ।
সেন্টমাটিন দ্বীপের জীববৈচিত্র
বঙ্গপসাগরের বিশাল জলরাশির মাঝে সারি সারি কেয়া বাগান, ঝাউবন, নারকেলের বাগান, শৈবাল, নুড়ি পাথর, ঝিনুক আর প্রবাল নিয়ে মাথা উচু করে আছে সেন্টমার্টিন। ১৭ বর্গ কিলোমিটারের অপূর্ব সুন্দর এই ছোট্ট দ্বীপটিতে দেখা পাবেন ‘অলিভ রিডলে’ (Olive Ridley) সহ আরো তিন প্রজাতির ছোট-বড় কচ্ছপ।
রয়েছে ১৭৫ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৬৮টি প্রজাতির প্রবাল, ১৫১ প্রজাতির শৈবাল, মোলাস্ক বা কড়ি জাতীয় প্রাণী রয়েছে ১৯১ প্রজাতির, কাঁকড়া রয়েছে ৪০ প্রজাতির, রয়েছে ২৩৪ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, ৩২ প্রজাতির সরীসৃপ ও উভচর প্রানী, ১২০ প্রজাতির পাখি ও ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী। যার সবই এখন প্রায় হুমকির মুখে।
সেন্টমাটিন ভ্রমণ সংক্রান্ত নতুন নির্দেশনা
বঙ্গপসাগরের বিশাল জররাশির মধ্যে জেগে ওঠা প্রকৃতির এই অকৃত্তিম উপহার সেন্টমাটিন পর্যটকের চাপসহ নানা কারণে হুমকির মুখে! বিলুপ্ত হতে হলেছে এখানকার জীববৈচিত্র। আর তাই সেন্ট মার্টিন দ্বীপটিকে রক্ষায় পর্যটকদের জন্য ভ্রমণে নতুন করে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে বাংলাদেশ সরকার। এবং এসব বিধিনিষেধের লঙ্ঘনকে আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ বলে ওই গণবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
সেন্টমাটিনকে “প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন” এলাকা ঘোষণা করার পাশাপাশি এক গণবিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ অধিদফতর বলেছে,
এরই প্রেক্ষিতে পরিবেশ ও বিরল জীববৈচিত্র্য পুনরুদ্ধারসহ প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনকে টিকিয়ে রাখার জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এর ৪ ধারায় সেন্ট মার্টিনে ভ্রমণের ক্ষেত্রে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে পরিবেশ অধিদফতর। সেগুলো নিন্মরুপঃ
- সেন্টমার্টিন সৈকতে মোটরসাইকেল, সাইকেল, রিকশা, ভ্যানসহ কোনো ধরনের যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক বাহন চালানো যাবে না।
- সেন্টমার্টিন সৈকত, সমুদ্র এবং নাফ নদীতে কোনপ্রকার প্লাস্টিক বা কোনো ধরনের বর্জ্য ফেলা যাবে না।
- সেন্টমার্টিনের পূর্ব দিকের সৈকতে গলাচিপার পর দক্ষিণ দিকে এবং পশ্চিম দিকের সৈকতে কোনাপাড়ার পর দক্ষিণ দিকে যাওয়া যাবে না।
- সেন্টমার্টিন দ্বীপের চারপাশে কোন নৌ-ভ্রমণ করা যাবে না।
- জোয়ার-ভাটা এলাকায় সৈকতে পাথরের ওপর দিয়ে হাঁটা যাবে না।
- দ্বীপে সামুদ্রিক কাছিমের ডিম পাড়ার স্থানে চলাফেরা, রাতে আলো জ্বালানো এবং ফ্ল্যাশলাইট ব্যবহার করে ছবি তোলা যাবে না।
- রাতের বেলা সৈকতে কোনো ধরনের আলো বা আগুন জ্বালানো, আতশবাজি ও ফানুস ওড়ানো যাবে না।
- সৈকতে মাইক বাজানো, হইচই এবং উচ্চস্বরে গান-বাজনা করা কিংবা বারবিকিউ পার্টি করা যাবে না।
- ছেঁড়াদিয়া দ্বীপে স্পিডবোট, কান্ট্রি বোট, ট্রলার কিংবা অন্যান্য জলযানে যাতায়াত কিংবা নোঙর করা যাবে না।
- সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে সরকারের অধিগ্রহণ করা ছেঁড়াদিয়া দ্বীপ ভ্রমণ করা যাবে না।
- প্রবাল, ঝিনুক, শামুক, সামুদ্রিক কাছিম, তারা মাছ, পাখি, রাজকাঁকড়া, সামুদ্রিক ঘাস, সামুদ্রিক শৈবাল এবং কেয়া ফল সংগ্রহ ও ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না।
- সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাওয়া আসার সময় জাহাজ থেকে পাখিকে চিপস বা অন্য কোনো খাবার খাওয়ানো যাবে না।
- সেন্টমার্টিন দ্বীপে খাবার পানির পরিমাণ সীমিত হওয়ায় পানির অপচয় রোধ করতে হবে।
সর্বোপরি সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রতিবেশের জন্য ক্ষতিকর -এ ধরনের সকল প্রকার কাজ থেকে বিরত থাকতে পর্যটকসহ সকলকে অনুরোধ জানানো হয়েছে অন্যথায় বিষয়গুলো আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে।
শুধুমাত্র আইন লঙ্ঘনের শাস্তির জন্যই নয়, এই সুন্দর ছোট্ট দ্বীপটিকে বাচিয়ে রাখাতে এর পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষা অত্যন্ত জরুরী। আসুন এই সুন্দর দ্বীপটিকে বাচিয়ে রাখতে সেন্টমার্টিন ভ্রমণ করার সময় উল্লেখিত নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে পালন করি। দেশের সম্পদ রক্ষায় সাহায়তা করি।
সেন্টমার্টিন ভ্রমণ বিষয়ে জানতে পড়ুনঃ ঘুরে আসুন দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন!