পৃথিবীতে জীবন কখন এসেছে সে বিষয়ে মত বিরোধ থাকলেও ওয়েস্টার্ন অষ্টেলিয়াতে ৩.৭ বিলিয়ন বছরের পুরানো ব্যাকটেরিয়া ধারনা দেয় জীবন বেশ পুরানো। [1] কোন কোন গবেষণায় ৪.৪ বিলিয়ন বছর আগেও প্রানের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছ।। [2]
পৃথিবী সৃষ্টির অব্যবহিত পরেই মহাসাগর তৈরি হয় এবং তখন থেকেই প্রানের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু জীবন এত পুরাতন হলেও জীবনের সংজ্ঞা এবং বৈশিষ্ট নিরূপন এখনও বেশ দুরূহ। বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয়, আধ্যাত্মিক, দার্শনিক ব্যাখ্যা থাকলেও আমরা বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা নিয়েই এখানে আলোচনা করবো।
জীবন কি?
আমরা জানি কোষ (Cell) হচ্ছে জীবনের কাঠামোগত (Structural) এবং ক্রিয়ামূলক (Functional) একক। সেই অনুযায়ী এককোষী (Unicellular) এবং বহুকোষী (Multicellular) জীবে ভাগ করা হয়েছে সমস্ত প্রানীজগতকে। এককোষী প্রানীদেরকে আবার প্রক্যারিওট (Prokaryote) যাদের নিউক্লিয়ার আবরন (Nuclear membrane) নেই এবং ইউক্যারিওট (Eukaryot), যাদের নিউক্লিয়ার আবরন আছে এই দুই শ্রেনীতে বিভক্ত করা হয়।
ভাইরাস আরও প্রাথমিক অবস্থা, কোষের বাইরে থাকার সময় অজীবন্ত আর কোষের ভিতরে প্রবেশ করলে কোষের মেশিনারী ব্যবহার করে সংখ্যাবৃদ্ধি করতে থাকে, এই পর্যায়ে ভাইরাস থাকে জীবন্ত। প্রানের এই নানাধরনের বৈচিত্রের কারনে প্রাণকে সংজ্ঞায়িত করা কঠিন হয়ে পড়ে।
তারফলে আমরা প্রানকে সংজ্ঞায়িত করার বদলে প্রানের গুনাগুন নিয়ে আলাপ করি যাতে জড় বস্তু থেকে প্রানকে আলাদা করা যায়। প্রত্যেক প্রানই কমবেশী এইসব গুনাবলী প্রদর্শন করে থাকে, এগুলোর মধ্যে খাদ্যগ্রহণ, বৃদ্ধি, বিপাক, নড়াচড়া অথবা চলন, বংশবৃদ্ধি, শ্বসন, নিষ্কাসন, উদ্দীপকের প্রতি প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন ইত্যাদি প্রধান।
তবে সব প্রানের, প্রানী এবং উদ্ভিদ সবার ভিতরই রয়েছে ডিএনএ (DNA, Deoxyribonucleic Acid) এবং ক্ষেত্রবিশেষে আরএনএ (RNA, Ribonucleic Acid) অনু যা জীবনের মূল কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রন করে। এই ডিএনএ আবার ডারউইনিয়ান বিবর্তন (Darwinian Evolution) অনুযায়ী বিকশিত হয়। [3]
NASA এর সংজ্ঞানুযায়ী ‘জীবন হচ্ছে একপ্রকার স্বাধীন এবং আত্মনির্ভর রাসায়নিক সত্ত্বা যা ডারউইনিয়ান বিবর্তন মেনে চলে। “Life is a self-sustaining chemical system capable of Darwinian evolution” and considered the specific features of the one life we know —Terran life. [4] এসব কিছুর কলেবর যত বৃদ্ধি পাবে জীবন তত জটিলতর, উন্নততর হয়ে উঠবে।
বহুকোষী প্রানের ক্ষেত্রে আমরা দেখি জটিল জৈব-রাসায়নিক বিকৃয়া, বিশেষ ধরনের কার্য সম্পাদনের জন্য একেক ধরনের কোষ একেক ধরনের বৈশিষ্টমন্ডিত (Differentiation and Specialization) হয়ে উঠছে, কিন্তু সব ধরনের কোষের ভিতরেই একই ধরনের জেনেটিক কোড বর্তমান থাকে, যার ফলে এইসব কোষকে আবার কান্ডকোষে (Stem cell) রুপান্তরিত করে যেকোন ধরনের কোষে পরিনত করা যায়।
এই গবেষণা এখন বায়োলজির মূল গবেষণা হিসাবে স্থান পেয়েছে। এরসংগে যোগ হয়েছে আয়ুবৃদ্ধির গবেষণা (Longjevity research) এবং কৃত্রিম প্রান উৎপাদনের গবেষণা (Artificial life research)। এবারে পরের অংশে আমরা আলোচনা করবো মরন বা Death নিয়ে।
এ সম্পর্কিত আরো কিছু প্রবন্ধ:
মরন কি?
বিভিন্ন ধরনের সায়েন্টিফিক পেপার, অভিধান অথবা বিশ্বকোষ থেকে আমরা মরনের বিভিন্ন ধরনের সংজ্ঞা পেয়ে থাকি। সংজ্ঞাগুলি বিভিন্ন ধরনের দেখা গেলেও এর মূল বক্তব্য একই। মরন হচ্ছে প্রানীর জীবন ধারনের জন্য যতগুলি গুরুত্বপুর্ণ উপাদান এবং কার্যক্রম রয়েছে তার সম্পুর্ণ বিনাশ বা অনুপস্থিতি।
‘Death is the irreversible cessation of all biological functions that sustain an organism’. [5] জীবনের মত বায়োলজিক্যাল কার্যক্রমও একবারে থেমে যায়না। সুতরাং মরণ একটা প্রকৃয়ার মত, কোনভাবেই তা হটাত করে হয়না। আগে বলা হত হৃদপিণ্ড স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেলে মানুষটির মৃত্যু হয়েছে।
এখন কৃত্রিমভাবে বিভিন্ন লাইফ সাপোর্টের মাধ্যমে আইসিইউ তে বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ কে বাচিয়ে রাখা সম্ভব। তবে ব্রেন ডেথ হয়ে গেলে তার আর সচেতনতায় ফিরে আসার কোন সম্ভাবনায় আপাতত নেই। অক্সিজেন ছাড়াও টিকে থাকার সম্ভাবনা একেক অঙ্গের ক্ষেত্রে একেক রকমের। মস্তিষ্কের ক্ষেত্রে অক্সিজেনের অভাবে নিম্নরূপ ঘটনা ঘটে থাকে. [6]
আপনি কীভাবে মারা যাচ্ছেন, মারা যাওয়ার সময় আপনার শরীরের তাপমাত্রা কত ছিল, রক্তজমাট প্রতিরোধী কোন ঔষধ প্রয়োগ করা হয়েছিল কিনা, আপনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন কিনা ইত্যাদি নানা ফ্যাক্টরের উপর নির্ভর করছে আপনার বিভিন্ন অঙ্গের কার্যকারিতা রক্ষার প্রশ্ন।
আপনি ট্রাকের তলায় পিষ্ট হয়ে গেলে অথবা আগুনে পুড়ে ভস্ব হয়ে গেলে আপনার কোন অঙ্গই কারো কাজে আসবে না। তবে স্বাভাবিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে আপনার বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ প্রতিস্থাপন করে কাজে লাগানো যায়। [7]
আজকাল এইসব সংগৃহীত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের রক্তনালীর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের ঠাণ্ডা তরল যেমন Eurocollins solution অথবা TransMedics Organ Care System এর মাধ্যমে হার্ট বা লাংসের ভিতর দিয়ে ঠান্ডা রক্ত প্রবাহিত করে আরও দীর্ঘ সময় ধরে অঙ্গ সমূহের কার্যকারিতা রক্ষা করা সম্ভব হয়। এরফলে এখন অঙ্গ প্রতিস্থাপন জিওগ্রাফীর বাউন্ডারীর বাইরেও সম্ভব হচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা এখন মিথিক্যাল বিষয়গুলো আর মানেন না। সোউল, স্পিরিট ইত্যাদি বিষয় নিয়ে মাথা ঘামানোর কাজ আপাতত থিওলজিয়ানদের হাতেই থাক।