বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক সড়ক প্রধানত অনেক উচ্চতায় পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়। আবার কিছু আছে সমুদ্রের এত কাছে যে, চালকরা ঝড়ে সময় সমুদ্রের পানিতে ভিজে যেতে পারেন। মৃত্যূ ঝুকি থাকা সত্ত্বেও প্রচুর পর্যটক এই রাস্তাগুলিতে ভ্রমন করেন থাকেন শুধুমাত্র এখানকার নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে।
বিশ্বের বেশিরভাগ নামকরা সড়ক সবসময়ই চালকদের জন্য একটু বেশি বিপজ্জনক। কারন সড়কগুলোতে রয়েছে দুর্বল নকশা এবং সেই সাথে গতির সীমাবদ্ধতা। এই সব বিপজ্জনক সড়ক -এর মধ্যে এমন কিছু সড়ক রয়েছে যেগুালোতে নির্ঘাৎ মৃত্যু জেনেও শুধুমাত্র ড্রাইভ করার আকর্ষনে হাজার হাজার মাইল দুর থেকে মানুষ ছুটে আসে।
চীন, বলিভিয়া এবং আলাস্কার মতো অপ্রসস্ত সড়কে চালকরা যেকোন সময় ভূমিধস, তুষারধ্বস এবং জলাবদ্ধতার মুখোমুখি হতে পারেন, আবার মারাত্মক দুর্ঘটনার জন্য খ্যাতি রয়েছে চীনের গুওলিয়াং টানেল বা নরওয়ের আটলান্টিক সড়কের মতো দর্শনীয় সড়কগুলির। তবে সড়কগুলির এই বিপজ্জনক চরিত্রই পর্যটকদের দিনে দিনে আরো বেশি আকৃষ্ট করেছে। এ রকমই বিপজ্জনক সড়ক সম্পর্কে বিস্তারিত জনাতে চেষ্টা করা হয়েছে এই লেখাটিতে।
পাকিস্তান ও চীনের মধ্যবর্তী বিপজ্জনক সড়ক করাকোরাম হাইওয়ে (The Karakoram Highway)

গত অক্টোবরের ঘটনা, মাহাসড়কে বাঁক নেওয়ার পথে একটি বাস উল্টে ১৭ জন মারা যান । ১৯৫৯ সালে রাস্তাটি প্রথম নির্মিত হওয়ার পর থেকে এ জাতীয় ঘটনা নিয়মিত আর এটি নির্মাণের সময় বিস্ফোরণ এবং ভূমিধসের প্রায় এক হাজার শ্রমিক এখানে মৃত্যুবরণ করেন। এই সাড়কটি একটি জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র, কেউ কেউ আবার এই বিপজ্জনক সড়কটিকে “বিশ্বের অষ্টম আশ্চর্য” হিসাবেও উল্লেখ করে থাকেন।
পাকিস্তান ও চীনের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত ৮০০ মাইলের করাকোরাম হাইওয়ে ভূমিধস, জলাবদ্ধতা, বন্যা এবং ভারী তুষার সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে নিয়মিত ভয়াবহ আকার ধারণ করে যার কারনে এই মহাসড়কে নিয়মিতই হতাহতের ঘটনা ঘটেই থাকে। ১৯৫৯ সালে রাস্তাটি প্রথম নির্মিত হওয়ার পর থেকে এ জাতীয় ঘটনা নিয়মিত আর এটি নির্মাণের সময় বিস্ফোরণ এবং ভূমিধসের প্রায় এক হাজার শ্রমিক এখানে মৃত্যুবরণ করেন।
বলিভিয়ার বিপজ্জনক সড়ক উত্তর ইউঙ্গাস রোড, (North Yungas Road)

”ডেথ রোড” নামে পরিচিত উত্তর ইউঙ্গাস রোড বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক সড়কগুলোর মধ্যে একটি, প্রতি বছর এই রাস্তায় প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ লোক মারা যায়। বলিভিয়ার কর্ডিলেরা ওরিয়েন্টাল পর্বতমালায় মাত্র ১২ ফুট প্রশস্ত আঁকা বাঁকা রাস্তাটি প্রায়শই বৃষ্টি এবং কুয়াশায় ডুবে থাকে।
খুব ছোট একটি ভুলও ভ্রমণকারীদের সরাসরি ৪০০০ থেকে ১৫০০০ ফুট নিচে মাটিতে আছড়ে ফেলতে পারে। তাছাড়া এই রাস্তাটির অনেকগুলি জায়গাতে নিরাপত্তা বেষ্টিনি না থাকায় যানবাহন চালকদের জন্য বাড়াতি বিপদ যোগ হয়েছে।
আটলান্টিক রোড, নরওয়ে (Atlantic Road, Norway)

১৯৮০ সালে তৈরি হওয়া নরওয়ের আটলান্টিক রোড পৃথিবীর ভয়ঙ্কর সব রাস্তার মধ্যে অন্যতম। দৈর্ঘ্যে ৮,২৭৪ মিটার বা ৫.১ মাইল রাস্তাটি নরওয়ের ক্রিসটিয়ানসউন্ড এবং মোল্ড শহর দুটিকে সংযুক্ত করেছ। পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ এই ভয়ঙ্কর রাস্তাটিতে ঝড় শুরু হওয়ার সাথে সাথে বাতাস এবং সমুদ্রের ঢেউ আঁছড়ে পরে যা চালকদের জন্য প্রচন্ড বিপত্তি তৈরি করে।
আলাস্কার বিপজ্জনক সড়ক ডাল্টন হাইওয়ে (Dalton Highway, Alaska)

ডাল্টন হাইওয়েতে চালকদের সবসময় তাদের সুরক্ষা সামগ্রী সাথে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয় কারন ৪১৪ মাইল দীর্ঘ রাস্তার ধরে কোথাও নেই কোন চিকিৎসা সুবিধা এবং ২৪০ মাইলের মধ্যে নেই কোনও গ্যাস স্টেশন, রেস্তোঁরা বা পানশালা।
বেশিরভাগ রাস্তাটি কাঁচা এবং ছেট পাথর দ্বারা তৈরি ফলে ভাল আবহাওয়াতেও চালকদের জন্য এই রাস্তটি কঠিন হয়ে পড়ে। আর শীতকালে রাস্তাটি বরফে ঢাকা পড়ে এতই পিচ্ছিল হয়ে যায় যে, বরফের রাস্তা ট্র্যাকাররাও এটি অতিক্রম করতে সাহস করেনা। তাছাড়া এখানে ঠান্ডায় স্থায়ীভাবে জমে যাওয়া ও তুষারধ্বষের ঝুঁকি রয়েছে সবসময়ই।
ইন্ডিয়ার বিপজ্জনক সড়ক জোজিলা পাস,(Zojila Pass, India)

ভারতের জোজিলা পাসে চালকদের জন্য অপেক্ষা করছে ১১৫০০ ফুট নিচে মৃত্যুর হাতছানি। ভারী তুষারপাতের কারণে রাস্তার উভয় পাশ দিয়ে বরফের ঘন দেয়াল তৈরি হওয়ার কারনে শীতকালে জোজিলা পাসটি প্রায়শই বন্ধ থাকে। অনুকুল আবহাওয়াতেও সরু পথে সুরক্ষা দেওয়াল না থাকায় চালকদের ১১৫০০ ফুট নিচে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
প্রতিকুল পরিবেশে তুষারপাত ও ভূমিধসের কারনে মাঝে মাঝেই অনেক পর্যটক উঁচুতে আটকা পড়ে যান যার করনে বিশ্বের বেশিরভাগ বিপজ্জনক রাস্তার মতো জোজিলা পাসও পর্যটকদের জন্য একটি ঝুঁকিপূর্ন রাস্তা।
চীনের বিপজ্জনক সড়ক গোলিয়াং টানেল (Guoliang Tunnel, China)

চীনের গোলিয়াং টানেল ৪০০০ ফুট লম্বা একটি সুড়ঙ্গপথ। গোলিয়াং নামের গ্রামটির ১৩ জন অধিবাসী কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই পাহাড়ের ভেতর দিয়ে নিজেদের চলাচলের জন্য সুড়ঙ্গ নির্মাণ শুরু করেন। এই সুড়ঙ্গপথটি চীনের হিনান প্রদেশের জিনসিয়াংয়ের হুইসিয়ানে অবস্থিত তাইহং পর্বতমালার অন্য প্রান্তের সঙ্গে গোলিয়াং গ্রামকে যুক্ত করে দিয়েছে।
পাহাড় কেটে প্রায় ১৩ ফুট প্রশস্ত সুড়ঙ্গ পথটি নির্মাণকাজ শুরু হয় ১৯৭২ সালে এবং ১৯৭৭ সালে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এই রাস্তাটির এক দিকে পাহাড় আর অন্যদিক সম্পূর্ণ ফাঁক এবং এই ফাঁকা জায়গার কয়েকশো মিটার নিচে রয়েছে মাটি।
কাবুল-জালালাবাদ রোড (Kabul-Jalalabad Road), আফগানিস্তানের বিপজ্জনক সড়ক

কাবুল ও জালালাবাদের মধ্যে অবস্থিত ৬৫ কিলোমিটারের রাস্তাটিতে মৃতের সংখ্যা এতই বেশি যে স্থানীয়রা গননা ভুলে যান। আর এই অত্যধিক হতাহতের ঘটনার জন্য এই রাস্তাটিকে “মৃত্যুর উপত্যকা” হিসবেও আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে।
দুর্গমতা এবং আফগান চালকদের বিপজ্জনক গাড়ি চালনার কারণে বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক রাস্তা হিসেবে পরিচিত পেয়েছে রাস্তাটি। দুই লেন বিশিষ্ঠ এই রাস্তাটিতে ওভারটেকিংয়ের জন্য যথেষ্ট জয়গা থাকালেও ড্রাইভারদের অতিরিক্ত গতি সবসময় দুর্ঘটনার কারন হয়ে দাড়ায়।
আরো পড়ুনঃ |
---|
সাদা বরফের মাঝে রক্ত ঝর্ণা (Blood Falls) ঘুরে আসুন দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন! নাফাখুম জলপ্রপাত; যতটা দুর্গম তার থেকে বেশি সুন্দর! |