যারা পাহাড় ভালবাসেন তাদের জন্য বান্দরবান ভ্রমণ সবসময়ই খুব আকর্ষণীয়। সমতলে যারা থকেন তাদের কখনও কখনও ইচ্ছে হতেই পারে একটু আলতো করে মেঘকে ছুয়ে দেখার! বা বারান্দায় বসে পাহাড় আর মেঘের লুকোচুরি খেলা দেখতে দেখতে আয়েস করে গরম চায়ে কাপে চুমুক দেওয়ার। খুব সম্ভব, চলে আসুন সময় করে বান্দরাবন, এখানে মেঘের চাদর গায়ে পাহাড়ের ঘুম ভাঙ্গে প্রতিদিন, সে মেঘ ছুয়ে যাবে আপনার শরীরও!
বান্দরবানের অবস্থান
আপনার এই ইচ্ছাটা খুব সহজেই পুরণ হতে পারে, সেজন্য আপনাকে বাংলাদেশের পাহাড়কন্যা খ্যাত অপরুপ প্রাকৃতিক সৈন্দর্যে ভরপুর জেলা বান্দরবান ভ্রমণ করতে হবে। বিভাগীয় সদর চট্টগ্রাম থেকে বান্দরবানের দুরত্ব ৭৫ কিলোমিটার এবং রাজধনী ঢাকা থেকে এ জেলার দূরত্ব প্রায় ৩২৫ কিলোমিটার। যারা বংলাদেশের অন্যান্য স্থান থেকে বান্দরবান ভ্রমণ করতে চান তাদের জন্য এই লেখাটিতে থাকছেঃ
- বান্দরবানে কিভাবে যাবেন তার গাইডলাইন।
- বান্দরবানে কোথায় থাকবেন তার ঠিকানা ও বুকিং নাম্বার।
- বান্দরবানের প্রধান প্রধান দর্শনীয় স্থানগুলোর বর্ণনা সহ সেখানে কিভাবে যানে।
আলীকদম, থানচি, নাইক্ষ্যংছড়ি, বান্দরবান সদর, রুমা, রোয়াংছড়ি ও লামা এই সাতটি উপজেলা নিয়ে গঠিত পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের অন্তর্গত বান্দরবান জেলাটি। ৪৪৭৯.০২ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এই জেলাটির পূর্বে রয়েছে রাঙ্গামাটি জেলা ও মায়ানমারের চিন প্রদেশ।
দক্ষিণ ও পশ্চিমে রয়েছে মায়ানমারেরই রাখাইন প্রদেশ। পশ্চিমে রয়েছে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা পৃথীবির দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত সহ কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন পর্যটন এলাকা ও চট্টগ্রাম জেলা এবং উত্তরে রয়েছে রাঙ্গামাটি জেলা।
বান্দরবান নামকরনের ইতিহাস
বান্দরবানের নামকরণ নিয়ে একটি জনশ্রতি প্রচলিত রয়েছে। পাহাড় থেকে নিয়মিত বানরের দল লোকালয়ে লবন খেতে আসতো। একটি সময় অতিবৃষ্টিতে বান্দরবানে ছড়ার পানি এতটাই বেড়ে যায় যে, পাহাড়ে থেকে লোকালয়ে আসা বানরগুলোর পক্ষে আর সহজে ছড়া পার হয়ে পাহাড়ে ফেরা সম্ভব ছিলো না। তখন স্থানীরা আশ্চর্য হয়ে লক্ষ করলেন যে, বানরগুলো একটি আর একটিকে ধরে ঠিক যেন দড়ির মত তৈরি করেছে এবং এভাবেই সকলে ছড়া পার হচ্ছে।
এর পরে থেকে এই স্থানটি ম্যাঅকছি ছড়া নামে পরিচিতি লাভ করতে থাকে। ’ম্যাঅকছি’ একটি মারমা শব্দ। মারমা ভাষায় ’ম্যাঅক’ অর্থ বানর, ’ছি’ অর্থ বাঁধ আর ছড়া অর্থ পহাড়ী ঝর্না। যেটাকে একসাথে বাংলা করলে দাড়ায় বানরবাঁধ ঝর্না। এর পরে সময়ের পরিক্রমায় বাংলা ভাষাভষিদের মুখে মুখে ম্যাঅকছির পরিবর্তে বান্দরবান শব্দটির প্রচলন শুরু হয়।
বান্দরবান ভ্রমণ; যেভাবে যাবেন
সিলেট বিভাগ ছাড়া বাংলাদেশের অন্যান্য যে কোন এলাকা থেকে বান্দরবান ভ্রমণ করতে আপনকে প্রথমে আসতে হবে ঢাকাতে এবং এর পরে ঢাকা থেকে যেতে হবে বান্দরবান। ঢকা থেকে বান্দরবান সরাসরি যেতে আপনাকে সড়ক পথ ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া বিমান অথবা রেলপথ ব্যবহার করতে হলে চট্টগ্রাম নেমে সড়ক পথে বান্দরবান আসতে হবে।
সিলেট থেকে সরাসরি বান্দরবান যেতে সড়ক পথ ব্যবাহর করুন অথবা রেলপথ বা আকাশ পথে চট্টগ্রাম হয়ে বান্দরবান যেতে হবে।
ঢাকা থেকে সড়ক পথে বান্দরবান ভ্রমণ
ঢাকা থেকে বান্দারবান আসার জন্য প্রথম সরির সকল পরিবহনেরই এসি এবং নন এসি বাস আছে তার যে কোন একটিতে চলে আসুন। নন এসি বাসের ভাড়া পড়বে ৫৫০ টাকা ও এসি বাসের ভাড়া পড়বে ৯৫০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা এবং সময় লাগে ৮ ঘন্টা থেকে ১০ ঘন্টা।
পরিচিত সকল পরিবহনেরই বাস এই রুটে চলাচল করে। ঢাকার বিভিন্ন জয়গাতে রয়েছে এই পরিবহন গুলোর কাউন্টার তার মধ্যে, গাবতলি, কলাবাগান, আরামবাগ, ফকিরাপুল, কমলাপুর উল্লেখযোগ্য।
আকাশ পথে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে বান্দরবান ভ্রমণ
বেশ কয়েকটি এয়ারলাইন্স ঢাকা চট্টগ্রাম সহ দেশের অভ্যন্তরীণ অন্যান্য রুটে তাদের ফ্লাইট পরিচালনা করে। আপনি চাইলে ঢাকা থেকে ৩০ থেকে ৩৫ মিটিনের মধ্যে বিমানে চেপে চট্টগ্রাম পর্যন্ত আসতে পারবেন।
সেক্ষেত্রে চট্টগ্রাম থেকে বাস অথবা ব্যক্তিগত/রিজার্ভ গাড়ি ব্যবহার করে বান্দরবান পর্যন্ত আসতে হবে। অভ্যন্তরীন রুটে চলাচলকারী বিমানের সকল তথ্য রয়েছে এখানেঃ অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান ভাড়া ও বুকিং সংক্রান্ত তথ্য।
রেল পাথে ঢাকা ও সিলেট থেকে চট্টগ্রাম হয়ে বান্দবান ভ্রমণ
সোনার বাংলা, সুবর্ণ এক্সপ্রেস, মহানগর, তূর্ণা এক্সপ্রেস সহ আরো কিছু মেইল ট্রেন ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম নিয়মিত যাওয়া আসা করে এগুলোর যে কোন একটিতে আপনার সুবিধামত যেতে পারবেন। শ্রেনীভেদে ট্রেনের ভাড়া পড়বে ৩৫০ থেকে ১২০০ টাকা।
চট্টগ্রাম স্টেশন নেমে আপনাকে বান্দরবানের বাসের জন্য যেতে হবে বদ্দারহাটে। এখান থেকে প্রতি ঘন্টায় নিয়মিত বাস পাবেন যার মধ্যে পূবালী ও পূর্বানী উল্লেখযোগ্য। বান্দরবান পর্যন্ত জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ২২০ টাকা। এছাড়া আপনি দামপাড়া বাস স্ট্যান্ড থেকেও বান্দরবান যাওয়ার বাস পাবেন।
বান্দরবান ভ্রমণে কোথায় থাকবেন
বান্দরবানে পৌছানোর পরে প্রথম যে বিষয়টি আপনার কাছে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ তা হচ্ছে থাকবেন কোথায়। চিন্তার কিছু নেই। এখানে থাকার জন্য হোটেল মোটলসহ বেশ কিছু ভালো রিসোর্ট আছে। চাইলে আগে থেকে বুকিং দিয়েও আপনি আসতে পারেন আবার বান্দরবান এসেও আপনি সরাসরি হোটেল নিতে পারেন।
এখানে থাকার খরচ নির্ভর করবে আপনি কোন সময় ভ্রমণ করছেন তার উপরে। পিক সিজন অর্থাৎ ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারীর মধ্যে এবং যে কোন সরকারি ছুটির মধ্যে যদি বেড়াতে যান তবে পর্যটকের চাপ একটু বেশি থাকায় ভাড়াটাও একটু বেশি গুনতে হবে।
আর এ সময়টাতে ভ্রমণের ক্ষেত্রে পরামর্শ থাকবে আগে থেকেই হোটেল রুম বুকিং করে তর পরে বেড়াতে যাবেন। পিক সিজন ছাড়া বাকি সব সময়ের জন্য ২০-৫০% ডিসকাউন্ট থাকে হোটেলগুলোতে। সকলের সুবিধার্তে উল্লেযোগ্য কিছু রিসোর্ট ও হোটেলের নাম এবং বুকিং নাম্বার নিচে উল্লেখ করা হয়েছে।
নীলাচল নীলাম্বারী রিসোর্ট (Nilachol Nilambori Resort)
অবস্থান: সমতল থেকে ১৬০০ ফুট উচুঁতে অবস্থিত এই রিসোর্টটি বান্দরবান শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দুরে নীলাচল পর্যটন কেন্দ্রে অবস্থিত।
ভাড়াঃ এখানে সবগুলোই কাপল রুম, ভাড়া ৩০০০টাকা।
বুকিংঃ 01551-444000
E-mail: [email protected]
ফেসবুক পেইজঃ নীলাচল নীলাম্বারী রিসোর্ট
হোটেল হিল ভিউ
অবস্থান: বান্দরবান শহরের বাস স্ট্যান্ড এর পাশেই।
ভাড়াঃ ভাড়া ১০০০ থেকে ২৫০০ টাকা।
বুকিংঃ +880 1818-270082
E-mail: [email protected]
ওয়েবসাইটঃ www.hotelhillviewbandarban.com
হোটেল প্লাজা:
অবস্থান: ওয়ার্ড নং ০৭, আর্মি পাড়া, বান্দরবান। (বাস স্ট্যান্ড থেকে ৫মিনিট হাঁটা দূরত্বে)
ভাড়াঃ ভাড়া ১৫০০ টাকা থেকে ৬০০০ হাজার টাকা।
বুকিংঃ +88-01678060107, +88-01678060273
E-mail: [email protected]
ওয়েবসাইটঃ হোটেল প্লাজা
রিভার ভিউ:
অবস্থান: বীর বিক্রম সড়ক, ইসলামপুর, বান্দরবান। (সাঙ্গু নদীর তীর ঘেষে হোটেলটির অবস্থান।)
ভাড়াঃ ভাড়া ২০০০ টাকা থেকে ৫০০০ হাজার টাকা।
বুকিংঃ +8801733115585
ওয়েবসাইটঃ রিভার ভিউ
পর্যটন মোটেল:
অবস্থান: পাহাড় ও লেকের পাশেই অবস্থিত। শহর থেকে ৪ কি:মি: দুরে মেঘলায় অবস্থিত।
ভাড়াঃ ভাড়া ৪০০ টাকা থেকে ৫৫০০ হাজার টাকা।
বুকিংঃ 01991139026, 01991139548
ওয়েবসাইটঃ পর্যটন মোটেল
বান্দরবান ভ্রমণ, যা কিছু দেখার আছে
তিনটি জেলা নিয়ে বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চল তার মধ্যে অন্যতম বান্দরবান। ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে এই জেলাটিতে রয়েছে পাহাড় আর নদী বেষ্ঠিত অনেক দর্শনীয় স্থান।
এই লেখাটি বান্দরবান জেলার অন্যতম দর্শনীয় স্থানগুলো নিয়ে সাজানো হয়েছে। আপনাদের ভ্রমণ আরো সহজ করতে বান্দরবান জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর বিবরন, সেখানে কিভাবে যাবেন সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
বগালেক (Bogalake)
স্থানীয় অনেকের কাছে এটার পরিচিতি ড্রাগন লেক নামে আর জাতীয়ভাবে সকলেই চেনে বগাকাইন লেক বা বগালেক (Bogalake) নামে। পর্যটকের যাত্রা পথের ক্লান্তি নিমেষেই দুর করে দেয় বগালেকের প্রাকৃতিক সৈন্দর্য। হোক সে সকাল, সন্ধ্যা অথবা রাত্রী, বগালেকের ভিন্ন ভিন্ন রূপে আপনাকে বিমোহীত করবেই।
বগালেকের শান্ত শীতল জল ছড়িয়ে আছে পাহাড়ের কোলে ঘেষে প্রায় ১৫ একর জায়গা নিয়ে। কি নেই এখানে! নীল আকাশ, সবুজ পাহাড়ের বেষ্ঠনীর মাঝে শান্ত শীতল জলের আধার এ যেন পর্যটকদের জন্য এক ভুস্বর্গ।
পাহাড়ের বেষ্ঠীত বগালেক সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় ১২০০ ফুট উচ্চতায় বান্দরবানের রুমা উপজেলা থেকে আরো ১৭ কিলোমিটার দূরে আবস্থিত। ধারণা করা হয় প্রায় ২০০০ বছর আগে এই লেকটির সৃষ্টি। তুলনামুলক ভাবে বর্ষার সময় থেশে শীতকালে বগালেক ভ্রমণ সুবিধাজনক।
তবে যারা এডভ্যাঞ্চারপ্রিয় এবং বর্ষায় বগালেকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে দেখতে চান তারা এই সময়টাই বেছে নেন। পুরোটা আঁকাবাঁকা পাহাড়ের পথে বান্দরবান থেকে বগালেক যেতে যে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য চোখে পড়বে তা আপনার সব ভ্রমণের ক্লান্তি দূর করে দেবে নিমেষেই।
বান্দরবান থেকে বগালেক যাবার উপায় ও থাকবেন কোথায় |
---|
বান্দরবান শহর থেকে বগালেক যেতে আপনাকে প্রথমে আসতে হবে রুমা বাজার এরপর রুমা বাজার থেকে বগালেক। আসুন প্রতিটি বিষয় পর্যায়ক্রমে জেনে নেওয়া যাক। বান্দরবান থেকে রুমা বাজার বান্দরবান থেকে রুমা বাজারের দুরত্ব ৪৮ কিলোমিটার। বান্দরবান থেকে লোকাল বাসে ভাড়া নেবে জনপ্রতি ১২০টাকা আর চাঁন্দের গাড়ি/জীপে ভাড়া পড়বে ৩০০০ টাকা থেকে ৪০০০ টাকা। চান্দের গাড়িতে যেতে পারবেন একসাথে ১০ থেকে ১৫ জন। বাসে সময় লাগে ৩ ঘন্টার কাছাকাছি আর জীপ বা চাঁন্দের গাড়িতে সময় লাগবে ২ ঘন্টার মত। রুমা বাজার পৌছে আপনাকে গাইড ভাড়া করতে হবে। এখান থেকে কিছু অনুমতির প্রয়োজন হবে যেটা সংগ্রহ করতে আাপনার গাইডই সাহায্য করবে। তবে মনে রাখবেন বিকাল ৪টার পরে রুমা কোনভাবেই রুমা বজার ত্যাগ করার অনুমতি পাবেন না রুমাবাজার থেকে বগালেক জীপ বা চান্দের গাড়ীতে রুমা বজার থেকে আপনাকে বগালেক যেতে হবে। এইসব গাড়িতে মোটামুটি ৮ থেকে ১৫ জন করে যাওয় যায়। রিজার্ভ নিলে ভড়া পড়বে ১৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা। আর যদি সদস্য সংখ্যা কম হয় তবে, কোন ছোট গ্রুপের সাথে কথা বলে গাড়ি শেয়ার করে নিন। আর তও যদি না যেতে চান তবে লোকাল গাড়িতে চলে যান এখানে জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ১০০ টাকা। সকাল ৮টা থেকে প্রতি ১ ঘন্টা পর পর চলে লোকাল চাঁদের গাড়ি। |
কেউক্রাডং
আপনার বান্দরবান ভ্রমণ আরো পরিপূর্ণ হবে কেউক্রাডং ভ্রমণে। প্রায় ৩১৭২ ফুট উঁচু কেউক্রাডংকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ হিসাবেই অনুমান করা হতো একসময়। তবে অনুমানটি যে ভুল ছিলো তা আধুনিক পরিমাপ পদ্ধতি আসার পরে প্রমানিত হয়েছে। উচ্চতার দিকে থেকে কেউক্রাডং এখন বাংলাদেশের মেধ্যে ৫ম সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ।
কেওক্রাডং মারমা শব্দ, যার অর্থ ’সবচেয়ে উঁচু পাথরের পাহাড়’। এটা বলার পেছনে কারনও আছে, দূর থেকে যদি কেওক্রাডাংকে দেখেন তবে মনে হবে এর চূড়া শূন্যে মিলিয়ে আছে। পাহাড় আর প্রকৃতির অদ্ভুৎ যুগলবন্দী আর মেঘ পাহারের প্রণয় দেখতে ঘুরে আসুন কেউক্রাডংয়ের চুড়া থেকে।
বান্দরবান থেকে কেওক্রাডং কিভাবে যাবেন ও আনুমনিক খরচ |
---|
বান্দরবান শহর থেকে আপনাকে প্রথমে আসতে হবে রুমা বাজার, এরপর রুমা বাজার থেকে বগালেক হয়ে যেতে হবে কেওক্রাডং। সেক্ষেত্রে আপনি যদিও একদিনের মধ্যে বান্দরবান থেকে কেওক্রাডং পৌঁছাতে পারবেন তবে তা খুবই কষ্টকর হয়ে যাবে। তার চেয়ে বড়ং একটি রাত বগালেকে কটিয়ে যান। সব পর্যটকরাই সাধারণত এটাই করে। বান্দরবান থেকে রুমা বাজার দুরত্ব ৪৮ কিলোমিটার, লোকাল বাসে ভাড়া নেবে জনপ্রতি ১২০টাকা এবং চাঁন্দের গাড়ি/জীপে ১০-১৫ জন একসাথে যাওয়া যায় ভাড় পড়বে ৩০০০ টাকা থেকে ৪০০০ টাকা। বাসে সময় লাগে ৩ ঘন্টার কাছাকাছি আর জীপ বা চাঁন্দের গাড়ি যেটাই বলেন ওটাতে সময় লাগবে ২ ঘন্টার মত। রুমা বাজার পৌছে আপনাকে গাই ভাড়া করতে হবে। এখান থেকে কিছু অনুমতির প্রয়োজন হবে, গাইডই আপনাকে সাহায্য করবে এই কাজে। তবে মনে রাখবেন বিকাল ৪টার পরে অনুমতি পাবেন না। রুমাবাজার থেকে বগালেক জীপ বা চান্দের গাড়ীতে করে ৮ থেকে ১৫ যেতে পারবেন। রিজার্ভ নিলে ভড়া পড়বে ১৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা। সদস্য কম থাকলে অন্য কোন ছোট গ্রুপের সাথে শেয়ার করতে পারেন। অথবা লোকাল গাড়িতেও যেতে পারবেন সেক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ১০০ টাকা। সকাল ৮টা থেকে প্রতি ১ ঘন্টা পর পর এখান থেকে লোকাল চাঁদের গাড়ি চলে। বগালেক থেকে কেউক্রাডং বগালেক পৌঁছে প্রথমে আপনাকে এখানকার আর্মি ক্যাম্পে রিপোর্ট করতে হবে। এখানে যদি রাত্রে থাকেন সেই ক্ষেত্রে পরদিন খুব সকালে রওনা দিলে ৩-৪ ঘন্টার মধ্যে ট্রেকিং করে কেওক্রাডংয়ের চূড়ায় পৌঁছে যাবেন। বগালেক থেকে পুরোটা রাস্তা আপনাকে পায়ে হেঁটে যেতে হবে, যার মধ্যে রয়েছে, বেশ কিছু খাড়া পাহাড়। আর যদি রাস্তা ভালো থাকে তবে গাড়িতে করেও যেতে পারবেন। আপনি ইচ্ছে করলে এখানে ১টা রাত থেকে সুর্যাস্ত ও সুর্যোদয় দেখে পরেরদিন বান্দরবান ফিরতে পারেন অথবা দিনের দিন ফিরতে হলে বগালেকে এসে রাত্রীযাপন করতে হবে। |
নীলগিরি
বান্দরবান ভ্রমণ করলেন অথচ নীলগিড়ি দেখলেন না তাহেল আপনার ভ্রমণটাই অসম্পূর্ন রয়ে গেলো। অপরুপ প্রাকৃতিক সৈন্দর্যের ভারপুর নীলগিরি কে অনেকে দার্জিলিংয়ের সাথেও তুলনা করে থাকেন। সমুদ্র পৃষ্ট থেকে ২২০০ ফুট উচ্চতায় এখানে দীগন্ত জুড়ে দেখতে পাবেন শুধুই সবুজ পাহাড়।
এখানে পাহাড়ের সাথে সরাদিন মেঘের লুকোচুরি খেলা আপনাকে সারাক্ষণ বিমোহিত করে রাখবে। আর আকাশ পরিস্কার থাকলে নীলগিরির চূড়া থেকে আপনার চোখে পড়বে কেওক্রাডং, বগালেক, কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকত, সাঙ্গু নদী এবং চট্টগ্রাম বন্দর।
নীলগিরির পাহাড় চুড়ায় রয়েছে ’নীলগিরি পর্যটন কেন্দ্র’ যা, এখানকার সেব থেকে সুন্দর পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে একটি যেটি বাংলাদেশে সেনাবাহীনি কতৃর্ক পরিচালিত। তাই পরিবার নিয়ে বছরের যে কোন সময় অনায়াসে এখান থেকে ঘুরে যেতে পারেন। তবে বর্ষায মৌসুমে কখনও কখনও অতি বৃষ্টির কারনে পাহাড় ধ্বসের আশংকায় রাস্তা বন্ধ থাকে।
নীলগিরি যাবার উপায় ও থাকবেন কোথায়
কিভাবে নীলগিরি যাবেন, কোথায় থাকবেন এবং কোথায় কি খাবেন তার বিস্তারিত জানতে পড়ুনঃ নীলগিরি ভ্রমণ! মেঘ ছুয়ে দেখার ইচ্ছেটা পূরণ হবে এখানে
নীলাচল
বান্দরবান শহর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে টাইগার পাড়ায় পাহাড়ের উপরে অবস্থিত নীলাচল পর্যটন কেন্দ্রটি। সমুদ্রপৃষ্ট থেকে প্রায় দুই হাজার ফুট উপরে অবস্থিত নীলাচলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য বান্দরবান ভ্রমণ পিপাসু সহ যে কোন পর্যটককে তৃপ্ত করবে। এখান থেকে সুর্যদয় আর সূর্যাস্তের মনমুগ্ধকর দৃশ্য আপনার ভ্রমণ কে পরিপূর্ণ করবে।
নীলাচল থেকে বান্দরবান শহরকে দেখতে পাবেন আর যদি আকাশ পরিষ্কার থাকে তবে দেখতে পাবেন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। পাহাড়ী পথ আর আঁকাবাঁকা রাস্তার প্রতিটি বাঁকে আাপনার চোখ আটকে যাবে নৈসর্গিক দৃশ্যে। আর বর্ষা, শরৎ ও হেমন্তে খুব কাছে থেকে দেখতে পাবেন ভেজা ভেজা মেঘগুলোকে।
ভ্রমণকারীদের জন্য নীলাচলে রয়েছে কয়েকটি বিশ্রামাগার ও রিসোর্ট। আপনি এখানে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান করতে পারবেন, আর মেঘর দেখা পেতে হলে আপনাকে খুব সকালে নীলাচলে থাকতে হবে। আপনি যদি এখানে রাত্রে অবস্থান করতে চান তবে এখানকার রিসোর্টে বুকিং দিয়ে অবস্থান করতে হবে।
নীলাচল যাবার উপায় |
---|
নীলাচল যাওয়ার জন্য বান্দরবান শহর থেকে সিএনজি, চাঁদের গাড়ি ও জীপ পাওয়া যায়। সিএনজি ও অটো রিকশায় খরচ পড়বে ৫০০ টাকা থেকে ১০০০ টাকা, জীপ ৮০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা আর চাঁদের গাড়ি পড়বে ১০০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা। সবখানেই দরদাম চলে একটু দরদাম করে নিন। |
নাফাখুম জলপ্রপাত
বান্দরবন জেলা শহর হতে ৭৯ কি.মি. দুরে থানচি উপজেলার দক্ষিনে রেমাক্রী ইউনিয়নে নাফাকুম জলপ্রপাতের অবস্থান। সাঙ্গু নদী থেকে উজানে হওয়ায় থানচি বাজার থেকে ধীরে ধীরে নৌকা বেয়ে উপরের দিকে উঠতে হয়।
এখানে নদী কিছুদূর পর পর ১ থেকে ২ ফুট এমন কি কোথাও কোথাও ৪ থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত ঢালু হয়ে নিচে নেমেছে। নদীর দুপাশের উচু উচু সবুজে মোড়ানো প্রতিটি পাহাড় যেন মেঘের কোলে শুয়ে আছে অবলিলায়।
রেমাক্রী খালের পানি প্রবাহ এই নাফাখুমে এসে হঠাৎ করেই বাঁক নিয়ে ২৫ থেকে ৩০ ফুট নিচে পড়ে সৃষ্টি হয়েছে নাফাখুম জলপ্রপাত। বর্ষার সময় নাফাখুম জলপ্রপাতের আকার বড় হয় এবং শীতের দিনে পানি প্রবাহ কমে তা ক্ষীন হয়ে যায়।
এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সম্পূর্ণরুপে উপভোগ করতে হলে আপনাকে এখানে আসতে হবে শীত এবং বর্ষার মাঝামাঝি কোন এক সময়ে। আর এই সময় বিবেচনায় সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাসের কেন এক সময় বেছে নিন নাফাখুম ভ্রমণের জন্য।
এই সময়টাতে জলপ্রপাতটি সম্পূর্নরুপে পানি প্রবাহে ভরপুর থাকে, ফলে উপর থেকে আছড়ে পড়া পানির আঘাতে চারিদিকে ঘন কুয়াশার সৃষ্টি হয়ে থাকে এবং থেমে থেকে বাতাসে উড়ে আসা জলকনা ভিজিয়ে দেবে আপনার শরীর।
কিভাবে যাবেন নাফাখুম এবং কোথায় থাকবেন তার বিস্তরিত রয়েছে এখানেঃ নাফাখুম জলপ্রপাত; যতটা দুর্গম তার থেকে বেশি সুন্দর!
স্বর্ণ মন্দির
বান্দরবান সদর থেকে প্রায় ৯ কিলোমিটার দূরে বালাঘটা এলাকায় স্বর্ণমন্দিরটি অবস্থিত। মন্দিরটি বৌদ্ধ ধাতু জাদী মন্দির ও মহাসুখ মন্দির নামেও স্থানীয়ভাবে বহুল পরিচিত। স্বর্ণমন্দিরকে যদি আসল স্বর্ণের তৈরি মন্দির মনে করেন তবে ভুল করবেন, কারন এখানে স্বর্ণের কোন স্থাপনাই নেই।
তবে এই মন্দিরে সোনালি রঙের ব্যবহার আপনার নজর কাড়বে। মুলত এটি পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থিত একটি প্যাগোডা, এবং এটা বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের জন্য একটি পবিত্র তীর্থস্থান। চীন ও থাইল্যান্ডের টেম্পলগুলোর আদলে তৈরি এই প্যাগোডাটি স্থাপনাশৈলীর একটি নিদর্শন হিসাবে ধরা যায়।
এখানে একটি প্রাচিন বৌদ্ধমুর্তির স্থাপন করা হয়েছে যা গৌতমবুদ্ধের কাছাকছি সময়ে নির্মিত। দেশ বিদেশ থেকে অনেক বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এখানে আসে প্রতি বছর শ্রদ্ধা জানাতে। এখানে পাহাড়ের একটি ছোট পুকুর আছে যার নাম দেবতা পুকুর। পর্যটকদের জন্য আকর্ষনীয় এই জায়গাটি ভ্রমণ করতে ভুলবেন না।
স্বর্ণ মন্দির কিভাবে যাবেন |
---|
বান্দরবান থেকে স্বর্ণমন্দির যেতে সিএনজি, অটোরিক্সা বা চান্দেরগাড়ী/জীপ ভাড়া করতে পারবেন। যাওয়া আসা মিলিয়ে খরচ পড়বে ৩০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা। তবে স্বর্ণমন্দিরের আশেপাশেই রয়েছে নীলগিরি ও মেঘলা রিসোর্ট। চাইলে আপনি সবগুলো একবারে দেখার জন্য গাড়ি রিজার্ভ করে নিতে পারেন। জীপ (৬-৮ সিট) ভাড়া পড়বে ১০০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা, চান্দের গাড়ি ভাড়া পড়বে ১২০০ টাকা থেকে ১৫০০টাকা এবং সিএনজি ভাড়া পড়বে ৫০০টাকা থেকে ৮০০ টাকা। তবে গাড়ি ঠিক করার আগে কি কি দেখবেন কোথায় কোথায় যাবেন তার সাথে ঠিকমত ভাড়া মিটিয়ে নিন। স্বর্ণমন্দির যেতে টোল দিতে হবে ২০/৩০ টাকা এবং স্বর্ণমন্দিরে প্রবেশ ফি জনপ্রতি ২০ টাকা। |
চলমান…