মধ্যযুগের রোম সাম্রাজ্যের সাবেক রাজধানী কনস্টান্টিনোপল যেটি বর্তমানে তুরষ্কের একটি অন্যতম শহর ইস্তাম্বুল। এই ইস্তাম্বুলের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ঐতিহাসিক স্থাপনা হায়া সোফিয়া (Hagia Sophia) কখনও অর্থডক্স গির্জা (Orthodox Church) কখনও ক্যাথলিক গির্জা (Catholic Church) আবার কখনও মসজিদ হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে।
সর্বশেষ ৮৬ বছর জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার পর আবারও তা রুপান্তরিত হলো মসজিদে। হায়া সোফিয়াকে বাইজেন্টাইন আর্কিটেকচারের রূপক হিসাবে বিবেচনা করা হয় এবং বলা হয় এটা বিশ্বের আর্কিটেকচারের ইতিহাস পরিবর্তনকারী একটি স্থাপনা।
ইতিহাসের পাতা থেকে হায়া সোফিয়া
বাইজেন্টাইন সম্রাট প্রথম জাস্টিনিয়ান ষষ্ঠ শতকে অর্থোডক্স গির্জা হিসেবে হায়া সোফিয়া নির্মান করেন। নির্মাণের পর থেকে ১২০৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত এটি অর্থোডক্স গির্জা হিসেবে ব্যবহার করা হয় এবং পরবর্তিতে এটিকে ক্যাথলিক গির্জায় রুপান্তর করা হয় যা ১২৬১ সাল পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়। তারপর এটি পুনরায় অর্থোডক্স গির্জায় রূপান্তর করা হয়, যার মেয়াদকাল ছিলো ১২৬১ থেকে ১৪৫৩ সাল পর্যন্ত।
এর পরে পঞ্চদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি তুরস্ক উসমানীয় বা অটোমান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পরে এই স্থাপনাটিকে মসজিদে রুপান্তর করা হয় এবং নামকরন করা হয় “ইম্পিরিয়াল মসজিদ” হিসাবে যা প্রায় ৫০০ বছর স্থায়ী ছিলো। বর্তমানে তুরস্কের প্রধান মসজিদ সুলতান আহমেদ মসজিদ, যা “Blue Mosque” নামে পরিচিত এটা তৈরি করা হয় ১৬১৬ সালে, তার আগে পর্যন্ত হাইয়া সোফিয়া বা “ইম্পিরিয়াল মসজিদ”-ই ছিল তুরস্কের প্রধান মসজিদ।
এরপর ১৯৩৫ সালে আধুনিক তুরস্কের স্থপতি ও স্বাধীন তুরস্কের প্রথম রাষ্ট্রপতি “মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক” এই স্থাপনাটিকে যাদুঘরে রূপান্তর করেন। এই স্থাপনাটিকে মসজিদে রূপান্তরের সময় এর দেয়ালে মার্বেলে অঙ্কিত যীশু খ্রিস্টের অনেক গুলো ছবি সিমেন্ট দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। ৫০০ বছর পরে যখন এটাকে যাদুঘরে রূপান্তরের সময় ঔই ছবিগুলো আবার পুনরুদ্ধার করা হয়।
ফলে যীশুখ্রিস্টের ছবিগুলো অনেকটা অস্পষ্ট হয়ে যায়। পরবর্তীতে “আল্লাহু ও মুহাম্মদ” এর আরবিতে অঙ্কিত মার্বেল পাথরও এর পাশাপাশি সংরক্ষিত হয়। যাদুঘর হিসাবে রুপান্তেরের পরে হায়া সেফিয়ার জন্য নতুন নিয়ম প্রবর্তন হয়। যেমন, “এই স্থাপনার মূল অংশ বা হলরুম কোন ধর্মীয় কাজে ব্যবহার করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ বিবেচিত হবে এবং তা মুসলিম অথবা খ্রিস্টান ধর্ম উভয়ের জন্য প্রযোজ্য হবে।
এই স্থাপনাতে উভয় ধর্মের মানুষের জন্য আলাদা সংরক্ষিত জায়গা রয়েছে। অর্থাৎ প্রার্থনা করর জন্য এই কমপ্লেক্ষটির মধ্যে একটি মসজিদ ও একটি গির্জা নির্মাণ করা হয়। যা শুধুমাত্র যাদুঘরের কর্মচারী কর্মকর্তাদের জন্য সংরক্ষিত ছিলো।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে হায়া সোফিয়া
সম্প্রতি তুরষ্কের প্রশাসনিক আদালতের রায়ে হায়া সোফিয়াকে আবারও জাদুঘর থেকে মসজিদে রুপান্তর করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তারই পদক্ষেপ হিসাবে গত শুক্রবার ৮৬ বছর পরে আবারও আজান শোনা গেলো হায়া সোফিয়াতে। আদালতের রায়ে বলা হয়েছে,
প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান গত বছরের এক নির্বাচনী প্রচারে ইউনেস্কো ঘোষিত ”বিশ্ব ঐতিহ্য” হায়া সোফিয়াকে জাদুঘর থেকে মসজিদে পরিণত করার কথা বলেছিলেন। তাছাড়া তুরস্কের ইসলামপন্থিরা অনেকদিন থেকেই হায়া সোফিয়াকে আবারও মসজিদে রূপান্তরের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। এদিকে, ইউনেস্কো বারাবর তাদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়া হায়া সোফিয়ার মর্যাদা পরিবর্তন না করার আহ্বান জানিয়েছিল তুরস্কের কাছে। তবে তুরস্কের ভাষ্য ছিলো অনেকটা এরকম যে, “আমাদের সম্পত্তি নিয়ে কী করব, তা আমাদের ব্যাপার”।
আরো পড়ুনঃ |
---|
ক্রিস্টোফার কলম্বাস; ঔপনিবেশিকের আড়ালে একজন বর্ণবাদী লুটেরা। দ্য গ্রেট স্প্যারো ক্যাম্পেইন’ ও প্রকৃতির নির্মম প্রতিশোধ! ঘোলদাড়ি মসজিদ; বৃহত্তর কুষ্টিয়া অঞ্চলের প্রথম মুসলিম নিদর্শণ! |
সূত্রঃ https://en.wikipedia.org/