সাজেক ভ্যালি! এখানে পাহাড়ের সাথে মেঘের খেলা চলে রাত ভর। আর বৃষ্টি হলে তো কথায় নেই, পূর্ণ হবে আপনার ভ্রমণের ষোল কলা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে হাজারফুট উচুতে যখন মেঘ ছুয়ে যাবে আপনার শরীর তখন মনে হবে অন্য এক জগতে চলে এসেছেন।
এখানকার সুর্য উদয় এবং অস্ত যাওয়া দুটোই আপনাকে বিমোহিত করবে। সাজেক ভ্যালি, বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর জায়গাগুলোর মধ্যে একটি। কিছুদিন আগেও সাজেক ভ্রমণ খুব একটা জনপ্রিয় ছিলনা, কিন্তু খুব অল্প কিছুদিনেই সবারই প্রিয় জায়গাগুলোর মধ্যে ঠাই করে নিয়েছে স্থানটি।
সাজেক ভ্যালির অবস্থান
বাংলাদেশের রাঙ্গামাটি জেলার সর্বউত্তরে মিজোরাম সীমান্তে বাঘাইছড়ি উপজেলার অন্তর্গত সাজেক ইউনিয়নে অবস্থিত সাজেক ভ্যালি। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পরিচালনায় সাজেক ভ্যালি এখন সবধরনের পর্যটকদের মাঝে প্রধান আকর্ষণ হয়ে উঠেছে।
পাহাড়ধস বা রাস্তাধস এরকম কোন ঝুকি না থাকায় সারাবছরই সাজেক যাওয়া যায়। এবং সাজেকে ভ্রমণরত পর্যটকদের জন্য রয়েছে সকল ধরণের নিরাপত্তার ব্যবস্থা। রুইলুইপাড়া এবং কংলাক পাড়া মিলেই মুলত সাজেক ভ্যালি, আর এই দুটি পাড়ার অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে যথাক্রমে ১৭২০ ফুট ও ১৮০০ ফুট।
সাজেক ভ্যালি ভ্রমণে যা দেখবেন
চারপাশে পাহাড় আর সাদা তুলোর মত মেঘ আপনাকে মুগ্ধ করবে। যেমন মুগ্ধ করবে এখানকার আবহাওয়া, কখনো বা খুব গরম আবার হটাৎ বৃষ্টিতে ভিজে যাবেন কিংবা নিমেষেই মেঘের ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে যাবে সবকিছু। এখানকার লুসাই জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত কংলাক পাহাড়টি পর্যটকদের কাছে ভ্রমণের প্রধান আকর্ষণ।
সাজেক ভ্যালির কংলাক পাড়া থেকে আপনি কর্ণফুলী নদীর উৎপত্তিস্থল দেখতে পাবেন। ভারতের লুসাই পাহাড় থেকে কর্নফুলি নিদীর উৎপত্তি। এছাড়া চাইলে দুই ঘন্টা ট্রেকিং করে রুইলুই পাড়া থেকে কমলক ঝর্ণা দেখে আসতে পারবেন। সুন্দর এই ঝর্ণাটি স্থানীয়দের কাছে পিদাম তৈসা বা সিকাম তৈসা ঝর্ণা নামেও পরিচিত।
শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির মত সাজেক কখনও পুরাতন হয় না। সাজেকে যেটি অবশ্যই মিস করবেন না, সেটি হলো সুর্যদয়। সূর্যোদয়ের আলোর সাথেই শুরু হয় মেঘ পাহাড়ের খেলা। তবে তার জন্য আপনাকে খুব ভোরে উঠে চলে যেতে হবে হ্যালিপ্যাডে, সেখান থেকেই সবচেয়ে ভালভাবে সূর্যোদয় দেখতে পাবেন। তবে সুর্যাস্তের সময়টা যে কোন উঁচু জায়গা থেকে দেখতে পাবেন। এখানকার সুর্যউদয়ের মত সূর্যাস্তও আপনাকে বিমোহিত করবে।
আর সন্ধ্যার পর রাত্রী হতেই বসবে আকাশে কোটি কোটি তারার মেলা। পরষ্কার আকাশে দেখা পাবেন মিল্কিওয়ে বা ছায়াপথেরও। এছাড়াও ঘুরে ঘুরে দেখতে পারেন চারপাশের স্থানীয় আদিবাসীদের জীবন যাপন। এখানকার সহজ সরল মানুষগুলোর সান্নিধ্য আপনার অবশ্যই ভাল লাগবে। আর হাতে একটু সময় নিয়ে ফিরলে পথে দেখে যেতে পারেন হাজাছড়া ঝর্ণা, দীঘিনালা ঝুলন্ত ব্রিজ ও দীঘিনালা বনবিহার।
কখন সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ করবেন
চির যৌবনা সাজেক ভ্যালি সারা বছরেই বর্ণিল সাজে সেজে থাকে। বছরের যে কোন সময়ই আপনি সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ করতে পারেন। তবে সাজেকের মেঘের লুকোচুরি দেখতে আপনাকে যেতে হবে বর্ষা, শরৎ ও হেমন্তে। এই সময়টাতেই সাজেকের চারপাশে মেঘের খেলা বেশি দেখতে পাবেন। তাই এই সময়গুলোই সাজেক ভ্রমণের জন্যে সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত সময়।
সাজেক ভ্যালি যেভাবে যাবেন
বেশ কয়েকভাবে সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ করতে পারবেন, যেমন আপনি যদি কক্সবাজার ভ্রমণ করার পরে সাজেক হয়ে ফিরতে চান সেটাও সম্ভব। আবার আপনি চট্টগ্রাম অথবা রাঙ্গামাটি থেকেও সাজেক ভ্রমণ করতে পারেন। তবে আপনি যেখান থেকেই আসেন না কেনো, আপনি বাঘাইহাট আর্মি ক্যাম্প থেকে সকাল ১০ থেকে দুপুর ২টার মধ্যে সাজেকের উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে পারবেন।
দেশের সব অঞ্চলের কথা চিন্তা করে সাজেক যাবার যতগুলো রুট আাছে তার সবগুলোই নিচে পর্যায়ক্রমে আলোচনা করা হয়েছে।
ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি
ঢাকা থেকে সরাসরি খাগড়াছড়ি যাওয়ার জন্য রয়েছে সড়কপথে অনেক পরিবহন। তবে আপনি যদি রেলপথ অথাবা আকাশ পথ ব্যবহার করতে চান সেক্ষেত্রে চট্টগ্রাম নেমে বাস অথাবা নিজস্ব পরিবহনের ব্যাবস্থা করতে হবে। নিচে সবগুলো রুট সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
সড়কপথে ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি
সাজেক ভ্যালি রাঙামাটি জেলার অন্তর্গত কিন্তু খাগড়াছড়ি দীঘিনালা হয়ে যাতায়াত অনেক সহজ। তাই আপনাকে সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ করতে হলে প্রথমে খাগড়াছড়িতে আসতে হবে। ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি অনেকগুলো বাস ছেড়ে আসে যার মধ্যে নন এসি এবং এসি দুটোই পাবেন।
নন এসি বাসের মধ্যে সৌদিয়া, শ্যামলি, শান্তি পরিবহন, এস আলম, ঈগল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে শান্তি পরিবহন সরাসরি দীঘিনালা পর্যন্ত চলাাচল করে। আর এসি বাসের মধ্যে রয়েছে বিআরটিসি এবং সেন্টমার্টিন পরিবহন।
নন এসি বাস ভাড়া ৫২০ টাকা থেকে ৫৮০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া ৭০০ টাকা। গাবতলি, কলাবাগন আরামবাগ থেকে খাগড়াছরির উদ্দেশ্যে বাসগুলো ছেড়ে যায় সাধারণত রাত্র ৯টা থেকে ১০টা মধ্যে। সাধারন সময়ে আসন পেতে সমস্যা না হলেও ছুটির দিনগুলোতে একটু পর্যটকের চাপ বেশি থাকায় আগে থেকেই টিকেট কেটে রাখা ভালো, নতুবা টিকেট পেতে সমস্যা হতে পারে।
বাসের টিকিট বুকিং ও বিস্তারিত তথ্যের জন্য যোগাযোগ নাম্বারঃ
পরিবহণ | ঢাকা কাউন্টার | খাগড়াছড়ি কাউন্টার |
সেন্টমার্টিন পরিবহনঃ | ০১৭৬২৬৯১৩৪১, ০১৭৬২৬৯১৩৪০ | ০১৭৬২৬৯১৩৫৮ |
শ্যামলী পরিবহন | ০২-৭১৯৪২৯১ (আরামবাগ) 02-9141047 (কলাবাগান ) ৯১২৪৫৪, ৮১২৪৮৮১ (আসাদগেট) | ০১৫৫২৭৪১৮৯৫ (খাগড়াছড়ি) ০১৭১১৩৭১৪০৫ (চট্টগ্রাম) |
শান্তি পরিবহন | ০১১৯০৯৯৪০০৭ (আরামবাগ) | ০৩৭১-৬১৮০৭ (খাগড়াছড়ি) ০১৮১৭৭১৫৫৫২ (চট্টগ্রাম) |
রেলপথে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে খাগড়াছড়ি
ঢাকা থেকে রেলপথে চট্রগ্রাম হয়ে খাগড়াছড়ি/সাজেক যেতে পারবেন সেক্ষেত্রে চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি পর্যন্ত আপনাকে বাসে অথবা ব্যাক্তিগত/ভাড়া গাড়ি করে যেতে হবে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে দিন ও রাত্র মিলিয়ে অনেকগুলো ট্রেন ছেড়ে যায়।
ঢাকা ও চট্টগ্রামের মধ্যে যে ট্রেনগুলো চলাচল করেঃ
- সোনার বাংলা এক্সপ্রেস (আন্তনগর)
- সুবর্ণ এক্সপ্রেস (আন্তনগর)
- মহানগর এক্সপ্রেস (আন্তনগর)
- তুর্ণা এক্সপ্রেস (আন্তনগর)
এছাড়াও কিছু মেইল ট্রেন রয়েছে যেগুলোতে ভড়া অনেক কম কিন্তু সময় বেশি লাগবে। ট্রেনে ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম যেতে শ্রেনী ভেদে ভাড়া পড়বে ৩২০ টাকা থেকে ১৫০০ টাকা।
আকাশ পথে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে খাগড়াছড়ি
আকাশ পথ ব্যবহার করে খাগড়াছড়ি যেতে চাইলে আপনাকে চট্টগ্রাম নেমে বাসে অথাবা ব্যাক্তিগত/ভড়া গাড়িতে করে খাগড়াছড়ি যেতে হবে। আকাশ পথে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সহ বেসরকারী সব এয়ারলাইন্সের নিয়মিত ফ্লাইট আছে, ভাড়া পড়বে সর্বনিম্ন ৩০০০ টকা থেকে ১০০০০ টাকা পর্যন্ত। দেশের অভ্যন্তরীণ রুটে আকাশ পথে ভ্রমণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতেঃ অভ্যন্তরীণ রুটে বিমানের আসন ভাড়া ও বুকিং সংক্রান্ত তথ্য
খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক ভ্যালি
খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক ভ্যালির দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটারের মত। খাগড়াছড়ি শহরের শাপলা চত্বরের কাছে জীপগাড়ি বা চাঁন্দের গাড়ি রিজার্ভ পাওয়া যায়। এগুলো রিজার্ভ করে আপনাকে সাজেক ভ্যালি যেতে হবে। যাওয়া আসা সহ দুইদিনের জন্যে ভাড়া পড়বে প্রায় ৮,০০০ টাকা আর যাদি আসা যাওয়ার পথে একটু ঘুরে দেখতে চান তবে তবে খরচ পড়বে প্রায় ১০,০০০ টাকা।
এক একটি গাড়িতে করে ১২ থেকে ১৫ জন করে যেতে পারবেন। যদি গ্রুপ ছোট হয় তবে অন্য কোন গ্রুপের সাথে শেয়ার করে গাড়ি নিলে খরচ কম হবে। এখানে সিএনজি ভাড়া করেও সাজেক ভ্যালি যেতে পারবেন খরচ পড়বে ৪০০০ টাকা থেকে ৫০০০ টাকার মত। তবে সাজেকের পাহাড়ী রস্তায় সিএনজি দিয়ে ভ্রমণ না করাই ভালো।
জীপ সমিতি ও পার্বত্য যানবাহন মালিক কল্যাণ সমিতি কর্তৃক সাজেক যাওয়ার ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া আছে যা নিম্নরুপঃ
খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যাওয়া আসা প্যাকেজ | ভাড়া | |
খাগড়াছড়ি হতে সাজেক শুধুমাত্র যাওয়া ও আসার জন্য | ৫,৪০০ | |
খাগড়াছড়ি হতে সাজেক যাওয়া-আসা এবং ১ রাত্রি অবস্থানের জন্য | ৭,৭০০ | |
খাগড়াছড়ি হতে সাজেক যাওয়া-আসা সাথে ১ রাত্রি যাপন এবং আলুটিলা রিচাং ঝর্ণা ও ঝুলন্ত ব্রিজ ঘুরে দেখার জন্য | ৯,৭০০ | |
খাগড়াছড়ি হতে সাজেক যাওয়া-আসা এবং ২ রাত্রি যাপনের জন্য | ১০,৫০০ | |
খাগড়াছড়ি হতে সাজেক যাওয়া-আসা, ২ রাত্রি যাপন সাথে আলুটিলা রিচাং ঝর্ণা ও ঝুলন্ত ব্রিজ দর্শনের জন্য | ১২,৫০০ |
কক্সবাজার থেকে সাজেক ভ্যালি
আপনি যদি কক্সবাজার থেকে সাজেক ভ্যালি যাওয়ার পরিকল্পনা করতে চান তবে প্রথমে আপনাকে খাগড়াছড়ি যেতে হবে। কক্সবাজার থেকে প্রতিদিন রাত্র রাত ৯ টা ও ১০টায় খাগড়াছড়ি উদ্দেশ্যে শান্তি পরিবহণের দুটি বাস চলাচল করে। তবে দুটি বাসই নন এসি এবং ভাড়া ৫৫০ টাকা।
চট্রগ্রাম থেকে সাজেক ভ্যালি
চট্রগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি বা দিঘীনালা হয়ে সাজেক যেতে পারবেন। চট্রগ্রামের কদমতলী থেকে সারাদিনে ৪টি বিআরটিসি এসি বাস বাস চলাচল করে, ভাড়া ২০০ টাকা । এছাড়া অক্সিজেন মোড় থেকে ১ ঘণ্টা পর পর শান্তি পরিবহনের বাস চলাচল করে। চট্রগ্রাম থেকে বাসে করে খাগড়াছড়ি যেতে সময় লাগবে ৪-৫ ঘন্টা আর ভড়া পড়বে ১৯০টাকা।
রাঙ্গামাটি থেকে সাজেক ভ্যালি
রাঙ্গামাটি থেকে নৌ এবং সড়ক উভয় পথেই বাঘাইছড়ি যাওয়া যায়। নৌপথে যেতে রিজার্ভ বাজার লঞ্চঘাট থেকে প্রতিদিন সকাল ৭ টা ৩০ থেকে ১০টা ৩০ এর মধ্যে লঞ্চ ছাড়ে, সময় লাগে ৫ থেকে ৬ ঘন্টা। আর ভাড়া জনপ্রতি ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা।
সড়কপথে রাঙ্গামাটি বাস টার্মিনাল থেকে সকাল ৭ টা ৩০ থেকে ৮ টা ৩০ এর মধ্যে বাস ছেড়ে যায়, জনপ্রতি ভাড়া নেবে ২০০ টাকা। এখানে সময় লাগে ৬ থেকে ৭ ঘন্টা। বাঘাইছড়ি থেকে জীপ (চাদেঁর গাড়ি) অথবা মোটর সাইকেলে সাজেক ভ্যালীতে যেতে পারবেন সেক্ষেত্রে জনপ্রতি ভাড়া লাগে ৩০০ টাকা।
সাজেক ভ্যালিতে কোথায় থাকবেন
ছুটির দিনে স্বাভবিক ভাবেই একটু পর্যটকের চাপ বেশি থাকে। তাই যে কোন ছুটির মধ্যে ভ্রমনের পরিকল্পনা থাকলে মাসখানেক আগেই বুকিং দিয়ে রাখুন, নয়তো ভালো রুম পাবার সম্ভবনা কম। এখানে প্রায় শতাধিক রিসোর্ট ও কটেজ আছে।
কটেজের মান ভেদে এক রাতের জন্যে রুম ভাড়া পড়বে ১৫০০ টাকা থেকে ১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত। মোটামুটি সব কটেজ থেকেই সুন্দরভাবে ভিউ পাবেন, তবে এখানকার আদিবাসী কটেজ গুলোতে তুলনামুলক ভাড়া একটু কম। তাই কম ভাড়াতে থাকতে হলে এখানে খোজ নিতে পারেন।
সাজেক ভ্যালি রিসোর্ট ও কটেজ
ভ্রমণ সময়ে সাজেক ভ্যালিতে রাত্রে থাকার জন্য যে সকল কটেজগুলো আছে তার মধ্যে থেকে উল্লেখযোগ্য কিছু কটেজের ধারণক্ষমতা, ভাড়া ও বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ নাম্বার নিচে দেওয়া হয়েছে।
রিসোর্ট রুংরাং (Resort RungRang)
সাজেক ভ্যালিতে ভাল রিসোর্টগুলোর মধ্যে অন্যতম রিসোর্ট রুংরাং। রিসোর্টে বসেই আপনি পাহাড় এবং মেঘের লুকোচুরি দেখতে পাবেন। চমৎকার গোছনো এই রিসোর্টে আছে ৪টি ডাবল এবং ৪টি কাপল রুম।
রুম ভাড়া ও বুকিংঃ
ছুটির দিনের জন্য ডাবল বেড রুম ভাড়া ৩৫০০ টাকা এবং কাপল ২৮০০ টাকা।
ছুটির দিন ছাড়া ডাবল বেড রুম ভাড়া ২৮০০ এবং কাপল ২০০০ টাকা।
যোগাযোগঃ 01884-710 723, 01869-649 817
ফেসবুক পেইজ
সাজেক রিসোর্ট (Sajek Resort)
সেনাবাহিনী দ্বারা পরিচালিত এই রিসোর্টে রয়েছে এসি এবং নন এসি মিলিয়ে ৪টি কক্ষ এবং সাথে খাবারের ব্যবস্থা। প্রতিটি রুম থেকেই সাজেকের সম্পুর্ণ প্রাকৃতিক দৃশ্য খুজে পাবনে। তাই বেশিরভাগ পর্যটকদের কাছে এই রিসোর্টটি বেশি প্রিয়। সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে থাকায় বাংলাদেশ সরকারের পদস্থ কর্মকর্তা এবং সেনাবাহিনীদের কর্মকর্তারা এখানে আলাদা ডিসকাউন্টও পেয়ে থাকেন।
রুম ভাড়া ও বুকিংঃ
এসি এবং নন এসি মিলিয়ে এভারেজ রুম ভাড়া পড়বে ১০,০০০ টাকা থেকে ১৫,০০০ টাকা।
যোগাযোগঃ 01859-025694; 01847-070395; 01769-302370;
রুন্ময় রিসোর্ট (Runmoy Resort)
এখানে ১ম ও ২য় তলা মিলিয়ে মোট ৫ টি রুম আছে এবং প্রতিটি কক্ষে থাকতে পারবেন ২ জন করে। তবে চাইলে পেমেন্ট করে এক্সট্রা বেড নিতে পারবেন।
রুম ভাড়া ও বুকিংঃ
নিচ তলার রুম ভাড়া ৪৪৫০ টাকা এবং এক্সট্রা বেডের জন্য ৬০০ টাকা।
উপরের তলায় ভাড়া ৪৯৫০ টাকা এবং এক্সট্রা বেডের জন্য ৬০০ টাকা।
যোগাযোগঃ 0186547688
ফেসবুক পেইজ
মেঘপুঞ্জি রিসোর্ট (Meghpunji Resort)
এই রিসোর্টটিতে রয়েছে মোট ৪ টি কটেজ এবং প্রতিটি কটেজে থাকতে পারবেন ৩ থেকে চার জন। ইকো ডেকোরেশন ও ফাইবার ওয়ালের কারনে ভিতর থেকেই চমৎকার ভিউ পাবেন প্রতিটি কটেজ থেকে। এখানে খাবারের কোন ব্যবস্থা নেই তবে রিসোর্টের খুব কাছেই রয়েছে অনেক খাবারের জায়গা।
কটেজ ভাড়া ও বুকিংঃ
২৫০০ থেকে ৩৫০০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে এই কটেজগুলি।
যোগাযোগঃ 01815-761065
ফেসবুক পেইজ
মেঘ মাচাং (Megh Machang)
ভ্রমণে একটু সাশ্রয়ী হতে কে না চাই। যারা একটু কম খরচে এখানে ভাল ভিউসহ থাকার জায়গা খোজেন তাদের জন্য এই রিসোর্টটি হবে চমৎকার। সাথে খাবার ব্যবস্থা থাকায় মেঘ মাচাং রিসোর্টটি অধিকাংশ পর্যটকের পছন্দ। এখানে রয়েছে মোট পাঁচটি কটেজ।
কটেজ ভাড়া ও বুকিংঃ
কটেজ ভেদে এখানে ভাড়া পড়বে ৩৫০০ টাকা থেকে ৪৫০০ টাকা।
যোগাযোগঃ 01822-168877
ফেসবুক পেইজ
ম্যাডভেঞ্চার রিসোর্ট (Madventure Resort)
২৪ ঘন্টা ইলেকট্রিসিটি ও পানির ব্যবস্থাসহ রিসোর্টের প্রতি তলায় আছে প্রশস্ত বারান্দা যেখান থেকে সাজেকের অপরুপ প্রকৃতি দেখতে পাবেন সবসময়।
রুম ভাড়া ও বুকিংঃ
প্রিমিয়াম কাপল রুম ভাড়া ৪০০০ টাকা
কাপল ক্লাসিক রুম ভাড়া ৩৫০০ টাকা
ডাবল ক্লাসিক রুম ভাড়া ৩৫০০ টাকা
01885-424242
ফেসবুক পেইজ
ট্রিনিটি রিসোর্ট (Trinity Resort)
সাজেকের প্রবেশ পথের ডানপাশে রুইলুই পাড়াই শিব মন্দিরের কাছে অবস্থিত ট্রিনিটি রিসোর্ট। চারটি ডাবল বেড রুম এবং চারটি কাপল রুম সহ সর্বমোট ৮টি কক্ষ রয়েছে এই রিসোর্টে।
রুম ভাড়া ও বুকিংঃ
ছুটির দিনগুলোতে রুম ভাড়া ৪৫০০ টাকা।
ছুটির দিন ছাড়া রুমের ভাড়া ৪০০০ টাকা।
যোগাযোগঃ 01869-232224
ফেসবুক পেইজ
জুমঘর ইকো রিসোর্ট (Jumghor Eco Resort)
ভোরের শিশিরে পা ভিজিয়ে সাজেকের সকাল দেখতে চান? জুমঘর ইকো রিসোর্টের কটেজের খোলা বারান্দায় দাড়িয়ে সাজেকের মেঘ আর পাহারের খেলা দেখার সৌভাগ্য হবে এখানে থাকলে। এখানে থাকার শেয়ার রুম এবং কাপল রুম দুটোই রয়েছে।
কটেজ ভাড়া ও বুকিংঃ
প্রতি কটেজ ভাড়া মাত্র ২০০০ থেকে ৩০০০ টাকা।
যোগাযোগঃ 01884-208060
ফেসবুক পেইজ
লুসাই কটেজ (TGB Lushai Cottage)
টিজিবি লুসাই কটেজের সুন্দর ইনটেরিওর ও ভালো ল্যান্ডস্কেপিক ভিউ আপনাকে মুগ্ধ করবে। এখানে কাপল, ফ্যামিলি কিংবা গ্রুপের জন্য বিভিন্ন ক্যাটাগরির রুম রয়েছে।
কটেজ ভাড়া ও বুকিংঃ
এখানে রুমভেদে ভাড়া ২৫০০ টাকা থেকে ৪৫০০ টাকা।
যোগাযোগঃ 01634-198005
ফেসবুক পেইজ
আলো রিসোর্ট (Alo Resort)
আলো রিসোর্টটি সাজেকের একটু আগে রুইলুই পাড়ায় অবস্থিত। এই রিসোর্টে রয়েছে মোট ৬ টি রুম, তার মধ্যে ডাবল রুম ৪ টি এবং সিঙ্গেল রুম ২টি। সাথে রয়েছে চমৎকার সুস্বাদু খাবারের ব্যবস্থা তাই এখানকার রুমগুলোর চাহিদাও একটু বেশি। এজন্য আপনাকে এখানে থাকতে হলে অন্তত এক সপ্তাহ আগে বুকিং দিয়ে রুম কনফার্ম করতে হবে।
রুম ভাড়া ও বুকিংঃ
এখানে রুম এবং বেড অনুযায়ী ভাড়া পড়বে ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা।
যোগাযোগঃ 01841-000645
ফেসবুক পেইজ
সারা নীলকুটির (Sara Nilkutir)
যেন সবুজের বুকে মেঘের সারা নীলকুটির রিসোর্টটি। সারা নীলকুটির রিসোর্টের অনন্য বৈশিষ্ট্য এটি পাহাড়ের একেবারে কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে যেন পাহাড়ের বুকেই নির্মাণ করা হয়েছে রিসোর্টটি। সবুজের মাঝখানে গড়ে তোলা এই রিসোর্টটির ইনটেরিয়র অসাধারন।
রুম ভাড়া ও বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগঃ
01873249470
ফেসবুক পেইজ
আদ্রিকা ইকো কটেজ (Adrika Echo Cottage)
টিজিবি লুসাই কটেজের পেছনে অবস্থিত এই রিসোটি যারা একটু খোলামেলা পরিবেশে নিজেদের মতো থাকতে চান তাদের জন্য একটি আদর্শ জায়গা। রিসোর্টের প্রশস্থ বারান্দায় আছে ইজি চেয়ার ও বসার ব্যবস্থা। এই রিসোর্টে মাত্র দুইটি বড় কক্ষ রয়েছে যাতে একটি মাস্টার বেড আর একটি ম্যাট্রেস/তোশক রয়েছে। যেখানে সর্বোচ্চ ৪ জন থাকা যায়।
রুম ভাড়া ও বুকিংঃ
ছুটির দিনের জন্য রুম ভাড়া ৪০০০ টাকা
অন্যান্য দিন রুম ভাড়া ৩৫০০ টাকা।
যোগাযোগঃ 01877-722859
ফেসবুক পেইজ
ছায়ানীড় ইকো রিসোর্ট (Chayanir Eco Resort)
ত্রিকোণাকার নান্দ্যনিক ঢঙে তৈরি এই রিসোর্টটি রুইলুই পাড়া ক্লাব হাউসের কাছে অবস্থান। স্ট্যান্ডার্ড ও প্রিমিয়াম এমন দুই ধরনের ৩টি কক্ষ আছে ছায়ানীড় ইকো রিসোর্টে। এই রিসোর্টের রুম ভাড়া সারাবছর প্রায় অপরিবর্তিতই থাকে।
রুম ভাড়া ও বুকিংঃ
স্ট্যান্ডার্ড রুমের ভাড়া ৩০০০ টাকা
প্রিমিয়াম রুম ভাড়া ৩৫০০ টাকা।
যোগাযোগঃ 01881-164864
ফেসবুক পেইজ
চাঁদের বাড়ি রিসোর্ট (Chander Bari Resort)
এই রিসোর্টে মোট ৮টি কক্ষ আছে, আর প্রতিটি কক্ষ থেকে মিজোরামের পাহাড়সহ প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখা যায়। এখানকার প্রতিটি কক্ষে দুইজন থাকার উপযোগী বিছানা এবং এক্সট্রা বেড রয়েছে।
রুম ভাড়া ও বুকিংঃ
ছুটির দিনে প্রিমিয়াম কটেজের রুম ভাড়া ৪০০০ টাকা এবং ইকোনমি কটেজের রুম ভাড়া ৩৫০০ টাকা
ছুটির দিন ছাড়া প্রিমিয়াম কটেজের রুম ভাড়া ৩৫০০ টাকা এবং ইকোনমি কটেজের রুম ভাড়া ৩০০০ টাকা
যোগাযোগঃ 01862-643860
ফেসবুক পেইজ
লক্ষণ কটেজ সালকা (Laxman Cottage Salka)
রুইলুই পাড়ায় অবস্থিত এই কটেজটি অনেকের কাছে সালকা ইকো রিসোর্ট হিসাবেও পরিচিত। এখানে এক্সক্লুসিভ ফুল ভিউ এবং সাধারণ ক্যাটাগরির মিলিয়ে রয়েছে মোট ৪টি কক্ষ।
রুম ভাড়া ও বুকিংঃ
এক্সক্লুসিভ ফুল ভিউ রুমের ভাড়া ৪০০০ টাকা
সাধারণ ক্যাটাগরির রুমের ভাড়া ২৫০০ টাকা।
যোগাযোগঃ 01847-356781
ফেসবুক পেইজ
সুমুই ইকো-কটেজ (Sumui Eco Resort)
রুইলুই পাড়াতে অবস্থিত সুমুই ইকো-কটেজে মিজোরাম ভিউয়ের দুইটি কক্ষ আছে। প্রতিটি কক্ষের জন্য রয়েছে অতিরিক্ত বেডিংয়ের ব্যবস্থা। তবে বছর জুড়ে এই কটেজের রুম ভাড়া প্রায় অপরিবর্তি থাকে।
রুম ভাড়া ও বুকিংঃ
বছরের যে কোনা সময়ের জন্য ৪০০০ টাকা।
যোগাযোগঃ 01880-908448
ফেসবুক পেইজ
স্থানীয় আদিবাসীদের সাথে থাকার ব্যবস্থা
আপনি এখানকার আদিবাসীদের থেকে তাদের ঘর থাকার জন্য ভাড়া নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে খরচ হবে জনপ্রতি ১৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা। তবে এখানে ফ্যামিলি বা কাপল থাকার জন্যে খুব একটা ভাল হবেনা।
সাজেক ভ্যালির খাওয়া দাওয়া
প্রায় সব রিসোর্টেই খাবার ব্যবস্থা রযেছে। তবে আপনি যদি আগে থেকে বলে রাখেন তবে পছন্দমত খাবার রান্না করে পরিবেশণ করবে। প্রতিজনের জন্য প্রতিবেলা খরচ হবে ১০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। খাবার মেনু হিসেবে পাবেন সাধারণত ভাত, ভাতা মুরগীর মাংস।
এখানে আদিবাসী ঘরেও খাওযার ব্যবস্থা আছে। খেতে চাইলে আগে থেকেই তাদের বলে রাখতে হবে কি খাবেন। সাজেকের পেঁপে, আনারস, কলা পাবেন অনেক, সাজেক ভ্যালি ভ্রমণে সারাদিন এগুলো খেয়ে সতেজ থাকতে পারবেন।
সাজেক ভ্যালি ভ্রমণ সক্রান্ত কিছু টিপসঃ
- এখানে সৌর বিদ্যুৎই একমাত্র ভরসা তাই মোবাইল চার্জ হতে বেশি সময় লাগে। তাই সাথে করে পাওয়ার ব্যাংক নিয়ে নিন।
- খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক ভ্যালি যেতে আঁকাবাঁকা ও উঁচু নিচু পথে জীপের ছাঁদে ভ্রমনে সতর্ক থাকুন।
- আদিবাসীদের ছবি তোলার ক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের অনুমতি নিয়ে নিন।
- ছুটির দিনে গেলে ঝামেলা এড়াতে আগে থেকেই (মাস খানেক) রুম বুকিং দিয়ে রাখুন।
- নিরাপত্তার সার্থে নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা আছেন তাদের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করুন।
- জাতীয় পরিচয় পত্রের কয়েটি কপি সাথে রাখুন।
- ১ দিনের বেশি সময়ের জন্যে সাজেক ভ্যালি গেলে শুধু যাবার জন্যে গাড়ি ঠিক করুন।
- সাজেক ভ্যালির পরিবেশ রক্ষায় যেখানে সেখানে ময়লা আবর্জনা ফেলা থেকে বিরত থাকুন।
তথ্য ও ছবিঃ Travelers of Dhaka ফেসবুক গ্রুপ থেকে।