রোগের সাথে লড়াই প্রাচীনকাল থেকেই। আগের লড়াইগুলো ছিল ব্যক্তিকেন্দ্রিক, অগোছালো, অবিন্যস্ত, অপরিকল্পিত, কিন্তু সময় পাল্টিয়েছে। এখন এই লড়াইটা ক্রমশঃ সুপরিকল্পিত, আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি পুর্বনির্ধারিত ফলাফল বয়ে আনছে, যার ফলে চিকিৎসা শাস্ত্র এখন আরও বিশুদ্ধ বিজ্ঞান নির্ভর একটা শাস্ত্র হিসাবে পরিনত হচ্ছে। পরিসংখ্যানের ব্যবহার এখন পুর্ব থেকেই ভবিষ্যতবানী করতে পারে যে, শেষ ফলাফল কি হতে পারে।
রোগের শ্রেণীবিন্যাস
চিকিৎসা বিজ্ঞানকে একটা দৃঢ় বৈজ্ঞানিক ভিত্তির উপর দাড় করানোর জন্য সবচেয়ে আগে প্রয়োজন ছিলো রোগের একটা সুনির্দিষ্ট শ্রেনী বিভাজন করন। ICD-10-CM codes (ICD- International Classification of Diseases) এ ব্যাপারে অগ্রনী ভূমিকা পালন করে আসছে। ২০২১ সালের জন্য ICD-10-CM codes অনুযায়ী রোগের যে শ্রেণীবিন্যাস করা হয়েছে তা নিম্নরুপঃ
- A00-B99 পর্যন্ত জীবানূ এবং পরজীবী ঘটিত রোগ,
- C00-D49 বিভিন্ন ধরনের টিউমার,
- D50-D89 রক্ত এবং ইমিউন সম্পর্কিত রোগ,
- E00-E89 হরমোন, এন্ডোক্রাইন রোগ, বিপাক জনিত রোগ,
- F01-F99 মানসিক রোগ,
- G00-G99 নার্ভ জনিত রোগ,
- H00-H59 চক্ষু রোগ,
- H60-H95 কানের রোগ,
- I00-I99 রক্ত সঞ্চালন তন্ত্রের রোগ,
- J00-J99 শ্বাসতন্ত্রের রোগ,
- K00-K95 পরিপাকতন্ত্রের রোগ,
- L00-L99 চর্ম রোগ,
- M00-M99 অস্থি এবং মাংসপেশীর রোগ,
- N00-N99 মুত্র ও প্রজননতন্ত্রের রোগ,
- O00-O9A প্রসব সম্বন্ধীয় রোগ,
- P00-P96 গর্ভকালীন মা ও শিশুর রোগ,
- Q00-Q99 জন্মগত ত্রুটি, ক্রোমোজম জনিত রোগ,
- R00-R99 শ্রেনী বিন্যস্ত হয়নি এমন রোগ,
- S00-T88 আঘাতজনিত, দুর্ঘটনা জনিত রোগ,
- U00-U85 বিশেষ ধরনের রোগ,
- V00-Y99 বিশেষ কারণে মৃত্যু,
- Z00-Z99 বিশেষ ধরনের স্ব্যাস্থ্য অবস্থা, তার কারন এবংস্বাস্থ্য সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান সমূহ।
ICD- International Classification of Diseases কর্তৃক রোগের এই যে শ্রেণীবিন্যাস করা হয়েছে, সে সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে এখানে ক্লিক করে তালিকাটি দেখে নিতে পারেন।
রোগের তীব্রতার স্কেল (Scale of disease severity)
রোগের তীব্রতা নির্ধারনের জন্য বিভিন্ন ধরনের স্কেল (Scale) বা মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং এই মাত্রাকে কম্পিউটারে অন্তর্ভুক্তির জন্য একেকটা গাণিতিক মান দেওয়া সম্ভব হয়েছে। ফলে এই মান বিশ্লেষণ করে রোগের তীব্রতার প্রকারভেদ করা সম্ভব হয়েছে এবং সেই অনুযায়ী চিকিৎসাপদ্ধতি কি হবে, চিকিৎসা ব্যবস্থার তুলনামূলক ফলাফল কি হবে, আরোগ্যসম্ভাবনা কতটুকু তার পুর্বাভাষ দেওয়া সম্ভব। এবং সেই সাথে সাথে এ সম্বন্ধে যত গবেষণার প্রয়োজন তাও করা সম্ভব।
এখানে রোগের তীব্রতা নির্ধারনের স্কেল বোঝাতে স্লগগো কমা স্লেল সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়েছে।
গ্লাসগো কমা স্কেল (Glasgow Coma Scale, GCS score)
রোগীর সচেতনতার (Consciousness) মাত্রা নিরূপনের জন্য এই স্কেল ব্যবহৃত হয়। এখানে বিভিন্ন প্রণোদনায় রোগীর চক্ষু উন্মীলন, কথা বলার ক্ষমতা, হাত-পা নড়ানো ইত্যাদি পরীক্ষা করা হয়। যেমন, যোগকৃত ফলাফল যদি ১৩-১৫ হয় তবে রোগীর সচেতনতা প্রায় স্বাভাবিক, যদি ৯-১২এর ভিতরে হয় তাহলে সে সেমিকমায় আক্রান্ত আর যদি ৩-৮ ভিতরে থাকে তবে সে গভীর কমায় আক্রান্ত। পরবর্তীতে আবার জিসিএস স্কোর করে দেখা হয় তার অবস্থার উন্নতি বা অবনতি হচ্ছে কিনা।
এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ইনজুরি বা আঘাত জনিত সমস্যার মাত্রা নিরুপনের জন্য স্কেল রয়েছে যেমনঃ
- Injury Severity scale (ISS),
- Trauma Scoring System,
- Head injury Severity scoring (HISS),
- Genital injury severity score (GISS),
- বুকের আঘাত জনিত ট্রমার স্কেল ইত্যাদি।
বুকের আঘাতজনিত ট্রমার ক্ষেত্রে Deadly Dozen বা ১২ ধরনের আঘাতের একটা তালিকা রয়েছে যেগুলো প্রাণনাশের কারন হতে পারে।
ট্রমা ছাড়াও ক্রনিক হেলথ ইভ্যালুয়েশন বা দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যাবস্থা নিরূপনের জন্য বিভিন্ন ধরনের স্কেল প্রবর্তিত হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে হাজার রকমের শ্রেণীবিভাজন। সবগুলোর নাম বা বিবরণ দিতে গেলে এই লেখাটিতে স্থান সংকুলান সম্বভ নয়, তাই সেগুলোর মধ্যে থেকে অন্যতম কয়েকটির নাম উল্লেখ করছিঃ
- APACHE Score (Acute Physiology and Chronic Health Evaluation Score),
- হার্টের রোগের মাত্রা নিরূপনের জন্য NYHA (Newyork Heart Association classification),
- অপারেশনের রিস্ক নির্ধারনের জন্য ASA classification (American Society of Anesthesilogists classification)
চিকিৎসার ফলাফলঃ
চিকিৎসার ফলাফল নির্ভর করে মূলত চারটি ফ্যাক্টরের উপর। রোগের তীব্রতা, রোগীর শারীরিক অবস্থা, চিকিৎসা প্রদানকারী চিকিৎসক, নার্স, টেকনিশিয়ান, ওয়ার্ড বয়, সর্বোপরি হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা, এবং ঔষধ, সার্জারী বা চিকিতসাপদ্ধতির কার্যকারিতার উপর।
সুতরাং ফলাফল হতে পারে- সম্পুর্ণ সুস্থতা, আংশিক সুস্থতা, দীর্ঘমেয়াদি রোগে পরিনত হওয়া, শারীরিক অক্ষমতা বা বিকলাঙ্গতা নিয়ে বেঁচে যাওয়া অথবা মৃত্যুবরন করা। প্রত্যেকটা স্তরকে মহিমান্বিত করা সামগ্রিক চিকিৎসা ব্যাবস্থাপনার দায়িত্ব ও কর্তব্য। তবে চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে কারা নিয়োজিত থাকবেন সেটাও যথাযথ হওয়া বাঞ্ছনীয়।
গবেষণাঃ
গানিতিকভাবে ডাটা সংরক্ষণ, প্রয়োজনানুসারে ডাটার ব্যবহার, বিশ্লেষণ, এর থেকে ফলাফল বের করা মেডিক্যাল রিসার্সের অংশ। কোন কোন ক্ষেত্রে পোস্টমর্টেম বা অটোপ্সি করা অত্যন্ত প্রয়োজন। এক্ষেত্রে পদ্ধতির ভুল-ত্রুটি বের করে তাকে আরও নিরাপদ, সক্ষম করে তোলা, নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার ইত্যাদি নানাবিধ ফলাফল আসতে পারে।
শেষ কথা
আমাদের সকলকে এ ব্যাপারে এগিয়ে আসতে হবে। অঙ্গ প্রতিস্থাপনের ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির শরীর থেকে উপযুক্ত সময়ে, উপযুক্ত ক্ষেত্রে, সেট প্রটোকলের মাধ্যমে অঙ্গ সংগ্রহ করা যেতে পারে, যা অন্য একজন মৃত্যু পথ যাত্রীকে আবার কিছু দিনের জন্য বাঁচিয়ে রাখতে পারে, কর্মক্ষম রাখতে পারে। এর থেকে বড় মানবিকতা আর কি হতে পারে।
এ সম্পর্কিত লেখাঃ |
---|
রোগ নির্ণয়ে মেডিকেল ইমেজিং প্রাণের উৎস সন্ধানে বিজ্ঞানের যত গবেষণা! |