ডিজনি +, এইচবিও, ম্যাক্সের মতো স্ট্রিমিং জায়ান্টদের বিপরিতে নেটফ্লিক্সের পথ চলাটা খুব একটা সহজ ছিলোনা। নেটফ্লিক্সের শুরুটা এখনকার মত সুপারহিরো মুভি বা স্টার ওয়ারের মত সিনেমা দিয়ে হয়নি, তাদের পথচলার শুরুটা হয়েছিলো ইতিহাসের সর্বাধিক জনপ্রিয় কিছু চলচ্চিত্রের মাধ্যমে। তবে সময়ের পরিবর্তনে স্ট্রিমিং যুদ্ধে টিকে থাকতে নেটফ্লিক্স তার পুরোনো চরিত্র বদলে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। দর্শক জনপ্রিয়তা এবং বক্স অফিসের আয়ের বিষয়টি মাথায় রেখেই আমরা সর্বোচ্চ আয় করা ১০ টি নেটফ্লিক্স সিনেমা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।
1. নেটফ্লিক্স সিনেমা Jurassic Park (1993)
নেটফ্লিক্স সিনেমা তালিকার প্রথমে থাকা এই চলচিত্রটিতে কোস্টারিকার কাছে মধ্য আমেরিকার প্রশান্ত মহাসাগর উপকূলে অবস্থিত ইসলা নুবলার কাল্পনিক দ্বীপে ধনী ব্যবসায়ী জন হ্যামন্ড এবং জিনগত বিজ্ঞানীদের একটি দল বিলুপ্ত ডাইনোসরের জন্য একটি পার্ক তৈরি করেছে। সেখানে দুর্ঘটনার ফলে যখন পার্কের বিদ্যুৎ সুবিধা এবং প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায় তখন এই দ্বীপটি থেকে বেচে ফেরার জন্য একটি ছোট্ট দলের প্রানান্তকর চেষ্টা জুরাসিক পার্ক চলচ্চিত্রটিতে তুলে ধরা হয়েছে।

জুরাসিক পার্ক (১৯৯৩) স্টিভেন স্পিলবার্গ পরিচালিত এবং ক্যাথলিন কেনেডি এবং জেরাল্ড আর মোলেন প্রযোজিত আমেরিকান কল্পবিজ্ঞানের একটি সাহসিক চলচ্চিত্র। এটি জুরাসিক পার্ক ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রথম সিনেমা যা, মাইকেল ক্রিচটনের উপন্যাস এবং ক্রাইচটন ও ডেভিড কোপের লেখা চিত্রনাট্য অবলম্বনে রচিত।
ক্রিচটনের উপন্যাস প্রকাশিত হওয়ার আগে চারটি স্টুডিও তার উপন্যাসটির স্বত্ব পাবার জন্য বিড করে। তবে ইউনিভার্সাল স্টুডিওকে সাথে নিয়ে স্পিলবার্গ ১৯৯০ সালে গল্পটি প্রকাশের আগেই ১.৫ মিলিয়ন ডলারে নিজেদের করে নেয় এবং সিনেমার জন্য উপন্যাসটি মানিয়ে নিতে ক্রাইচটনকে অতিরিক্ত আরো 500,000 ডলারে ভাড়া করেন।
বক্স অফিসের ইনকামঃ
জুরাসিক পার্ক (১৯৯৩) চলচ্চিত্রটি বিশ্বব্যাপী ৯১৪ মিলিয়ন ইউএস ডলারেরও বেশি আয় করেছে যা ১৯৯৩ সালের সর্বাধিক উপার্জনকারী চলচ্চিত্র এবং একই সময়ে সর্বাধিক উপার্জন করা চলচ্চিত্র হিসাবে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত তার অবস্থান ধরে রেখেছিলো।
2. নেটফ্লিক্স সিনেমা 2012 (2009)

সর্বোচ্চ আয় করা ১০ টি নেটফ্লিক্স সিনেমা তালিকার ২য় পর্যায়ে অবস্থান করছে হল রোল্যান্ড এমেরিচ পরিচালিত ২০০৯ সলের ১৩ই নভেম্বর মুক্তি পাওয়া একটি আমেরিকান দুর্যোগ চলচ্চিত্র 2012। চলচ্চিত্রটি প্রযোজনা করেছেন হ্যারাল্ড ক্লোজার, মার্ক গর্ডন এবং ল্যারি জে ফ্রাঙ্কো এবং লিখেছেন ক্লোজার এবং এমেরিচ। সিনেমাটিতে জন কুস্যাক, চিওয়েল এজিওফর, আমান্ডা পিট, অলিভার প্ল্যাট, থান্দি নিউটন, ড্যানি গ্লোভার এবং উডি হ্যারেলসনের মত অভিনেতারা অভিনয় করেছেন।
চলচ্চিত্রটিতে ভূতাত্ত্বিক অ্যাড্রিয়ান হেলসলে (ইজিওফোর) আবিষ্কার করেন যে পৃথিবীর ভূত্বকটি গ্রহগুলির এক প্রান্তিকরণের ফলে সৃষ্ট দুর্যোগে পৃথিবী ধ্বংশ হয়ে যাবে। পৃথিবী ধ্বংশ এবং এই ধ্বংশের থেকে মানবসভ্যতাকে রক্ষার প্রানান্তকর চেষ্টাকে এই চলচ্চিত্রে চিত্রায়িত করা হয়েছে।
বক্স অফিসের ইনকামঃ
2012 প্রডাকশনটি ২০০ মিলিয়ন ইউএস ডলার খরচের বিপরিতে বিশ্বব্যাপী ৭৬৯ মিলিয়ন ইউএস ডলার আয় করে যা ছিলো ২০০৯ সালের পঞ্চম সর্বোচ্চ-উপার্জনকারী চলচ্চিত্র।
3. Indiana Jones and the Kingdom of the Crystal Skull (2008)

বেশি আয় করা সিনেমাগুলির একটি বিষয়টি হ’ল সেগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সিকুয়্যাল তৈরি করে এবং দর্শক হতাশ করে। ইন্ডিয়ানা জোনের কোন ভাল ভক্তও ২০০৮ এর সিক্যুয়ালের সুপারিশ করবে না, তবে আমরা এখানে কথা বলছি বেশি আয়ের ইস্যু নিয়ে।
পৌরানিক কাহিনি নিয়ে নির্মিত এই চলচ্চিত্রে ১৯৫7 সালে প্রত্নতাত্ত্বিক এবং অ্যাডভেঞ্চারার ড: হেনরি “ইন্ডিয়ানা” জোন্স, জুনিয়রকে আবার অভিযানে ডাকা হয় এবং ক্রিস্টাল স্কালস নামে পরিচিত রহস্যময় নিদর্শনগুলির গোপন রহস্য উদঘাটন করার জন্য তারা একটি সোভিয়েত ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে পড়ে।
স্টিভেন স্পিলবার্গ এর পরিচালনায় চলচ্চিত্রটিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন হ্যারিসন ফোর্ড, কেট ব্লাঞ্চেট, শিয়া লাবিউফ।
বক্স অফিসের ইনকামঃ
১৮৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার বাজেটের সিনেমাটি সারা বিশ্বে বক্স অফিসে ইনকাম করে ৭৯০ মিলিয়ন ইউএস ডলার।
4. নেটফ্লিক্স সিনেমা Ne Zha (2019)

২৬ জুলাই ২০১৯ চীনের মূল ভূখণ্ড জুড়ে থিয়েটারগুলিতে রিলিজ হওয়া “নে ঝা” আইএমএক্স-এ প্রকাশিত চীনের প্রথম থ্রিডি অ্যানিমেটেড ফিচার ফিল্ম। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে উদ্বোধনী হওয়ায় বক্স অফিসের একাধিক রেকর্ড ভেঙেছিল চলচ্চিত্রটি এবং অনেকে এটাকে “চীনা অ্যানিমেশন ইতিহাসের মাইলফলক” হিসাবে বর্ণনা করেন।
অনন্য ক্ষমতা নিয়ে জন্মগ্রহণকারী একটি বালক ও তার সম্প্রদায়কে বাচানোর জন্য অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে লড়ায়ের কাহিনি নিয়ে নির্মান করা হয়েছে চাইনিজ এনিমেশন চলচ্চিত্রটি। ইউ ইয়াং ও ইউনূন ওয়েই এর গল্প অবলম্বনে চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন ইউ ইয়াং। মুল চরিত্রের জন্য কন্ঠ দিয়েছেন ইয়ান্টিং ল, জোসেফ, মো হান।
বক্স অফিসের ইনকামঃ
মাত্র ২০ মিলিয়ন ইউএস ডলার বাজেটের এই নেটফ্লিক্স সিনেমা ইনকাম করে ৭২৯ মিলিয়ন ইউএস ডলার।
5. The Wandering Earth (2019)

হুগো পুরষ্কার বিজয়ী লিউ সিক্সিনের উপন্যাস অবলম্বনে ফ্রাঙ্ক গওয়ের 2019 অ্যাকশন ফিল্মটি 2061 সালে একদল নভোচারী এবং পৃথিবী রক্ষায় তাদের মিশনকে কেন্দ্র করে। সূর্য ডুবে যাওয়ার সাথে সাথে আমাদের গ্রহকে হুমকির মুখে ফেলেছে, তবে সৌরজগতের কেন্দ্র থেকে দূরে সরে যেতেও অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। আমাদের গ্রহকে বাচাতে বিপদজনক একটি মিশন নিয়ে চিত্রায়িত হয়েছে এই চাইনিজ নেটফ্লিক্স সিনেমা।
বক্স অফিসের ইনকামঃ
আন্তর্জাতিকভাবে রিলিজের পরে চলচ্চিত্রটি ৩টি সাপ্তাাহিক ছুটিতে বক্স অফিসে শীর্ষে ছিল এবং ছয় দিনের ওপেনিং গ্রস ছিল ২৮৯ মিলিয়ন ইউএস ডলার এবং বিশ্বব্যাপী মোট ইনকাম করে 700 মিলিয়ন ইউএস ডলার।
6. The Lost World: Jurassic Park (1997)
’দা লষ্ট ওয়ার্ল্ড’ একটি অনন্য সিরিজ কারন চলচ্চিত্র রিলিজ হওয়ার পরে দা লষ্ট ওয়ার্ল্ড বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। এটি কেবল চলচ্চিত্র নির্মাতাদের ক্ষেত্রেই নয়, লেখক মাইকেল ক্রিক্টনের উপরও অতিরিক্ত চাপ বাড়িয়ে তোলে।

মাইকেল ক্রিকটনের লেখা উপন্যাসের চিত্রনাট্যে রুপান্তর করেন ডেভিড কোপ এবং পরিচালনা করেন স্টিভেন স্পিলবার্গ। মুল ভমিকায় অভিনয় করেছেন জেফ গোল্ডব্লাম, জুলিয়ান মুর, পিট পোস্টলেথওয়েট।
জুরাসিক পার্কের আগের অবস্থান থেকে সাতাশি মাইল দূরের একটি দ্বীপে গবেষক দল প্রেরণ করা হয়েছে মুক্ত হওয়া ডাইনোসরদের তথ্য ও ছবি তোলার জন্য। আবার একই স্থানে ইনজেন বায়োইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থা বড় একটি দল পাঠিয়েছে কিছু ডাইনোসরকে ধরে সান দিয়েগোতে একটি নতুন জুরাসিক পার্ক স্থাপনের জন্য। উভয় দলই সফল অনুসন্ধানের পরে মূল ভূখণ্ডে ফিরে যাবার কাহিনি নিয়ে চিত্রায়িত হয়েছে চলচ্চিত্রটি।
বক্স অফিসের ইনকামঃ
১৯৯৭ সালে রিলিজ হওয়া ৭৩ মিলিয়ন ইউএস ডলারের এই চলচ্চিত্রটি বিশ্বব্যাপি আয় করে ৬১৮ মিলিয়ন ইউএস ডলারের ও বেশি।
7. Madagascar: Escape 2 Africa (2008)

২০০৫ সালে প্রথম রিলিজ হওয়া এনিমেটেড চলচ্চিত্র “মাদাগাস্কার” এর সিক্যুয়াল, যেখানে নিউইয়র্ক চিড়িয়াখানার প্রাণী, অ্যালেক্স দ্য লায়ন, মার্টি জেব্রা, মেলম্যান দ্যা জিরাফ এবং গ্লোরিয়া হিপ্পো ক্রাশ ল্যান্ডিংয়ের কারনে মাদাগাস্কারে আটকা পড়ে।
২০০৮ সালে রিলিজ হওয়া চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেন এরিক ডার্নেল ও টম ম্যাকগ্রা, কাহিনী ও চিত্রনাট্য এটান কোহেন ও এরিক ডার্নেল, মূল চিরিত্রে কন্ঠ দিয়েছেন বেন স্টিলার, ক্রিস রক, ডেভিড শুইমার।
বক্স অফিসের ইনকামঃ
১০৩ মিলিয়ন ইউএস ডলারের বাজেটের চলচ্চিত্রটি সারা বিশ্বে আয় করে প্রায় ৬০৪ মিলিয়ন ইউএস ডলার।
8. নেটফ্লিক্স সিনেমা The Croods (2013)

“The Croods” গুহামানদের এক অভিনব পরিবার, যারা কঠিন ভূখণ্ডে কঠোর নিয়ম অনুসারে জীবনযাপন করে বেঁচে থাকে। কিন্তু “দ্য এন্ড” নামে পরিচিত বিপর্যয়ের পরে তাদের বাড়িটি যখন ধ্বংস হয়ে যায়, তখন তারা তাদের আশ্রয় ছেড়ে একটি নতুন বাসস্থান খুঁজতে অজানা প্রান্তরে চলে যেতে বাধ্য হয়।
২০১৩ সালে রিলিজ হওয়া এনিমেটেড চলচ্চিত্রটিতে মুল চরিত্রে কন্ঠ দিয়েছেন নিকোলাস কেজ, রায়ান রেনল্ডস, এমা স্টোন এর মত তারকারা। জন ক্লিজ, কার্ক ডিমিকো এবং ক্রিস স্যান্ডার্স এর লেখা গল্প থেকে চিত্রনাট্য করেছেন ক্রিস স্যান্ডার্স ও কার্ক ডিমিকো। চলচ্চিত্রটি যৌথভাবে পরিচালনা করেছেন কার্ক ডিমিকো ও ক্রিস স্যান্ডার্স
বক্স অফিসের ইনকামঃ
১৩৫ মিলিয়ন ইউএস ডলার বাজেটের চলচ্চিত্রটি ২৪ শে মার্চ ২০১৩ সালে প্রথম যুক্তরাষ্ট্রে রিলিজ হয় এবং সারা বিশ্বে আয় করে ৫৮৭ মিলিয়ন ইউএস ডলারেরও বেশি।
9. Operation Red Sea (2018)

দান্তে ল্যাম (লিন চাওকিয়ান হিসাবে) পরিচালিত চিলচ্চিত্রটি ২৩শে ফেব্রুয়ারী ২০১৩ যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম রিলিজ হয়। ঝুঝু চেন, জি ফেং ও এরিক লিন এর কহিনী ও চিত্রনাট্যে অভিনয় করেছেন ইয়ে ঝাং, জনি হুয়াং ও হাই-কিং ছাড়াও আরো অনেকে।
একটি সত্য গল্প অবলম্বনে নেটফ্লিক্সের বক্স অফিস হিট করা এ্যাকশনধর্মী চলচ্চিত্র এটি। ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধের সময় কয়েকশো চীনা এবং কিছু বিদেশী নাগরিককে চীনা নৌবাহিনীর সদস্যরা সরিয়ে নিয়েছিল। যেখানে মেরিন কর্পস-এর জিয়াওলং অ্যাসল্ট টিম একদল জলদস্যুদের বিভিন্ন বাধার মুখে পড়ে।
বক্স অফিসের ইনকামঃ
৭০ মিলিয়ন ইউএস ডলারের একশনধর্মী এই চলচ্চিত্রটি বিশ্বব্যপী আয় করে প্রায় ৫৭৯ মিলিয়ন ইউএস ডলার।
10. Despicable Me (2010)

০৯ জুলািই ২০১০ সালে যুক্তরাষ্টে প্রথম রিলিজ হওয়া এনিমেটেড চলচ্চিত্রটি পরিচালনা করেছেন পিয়ের কফিন ও ক্রিস রেনাউড। সার্জিও পাব্লোস এর গল্পে চিত্রনাট্য লিখেছেন সিনকো পল ও কেন দাউরিও। আর মুল চরিত্রে কন্ঠ দিয়েছেন স্টিভ ক্যারেল, জেসন সেগেল ও রাসেল ব্র্যান্ড|
বক্স অফিসের ইনকামঃ
৬৯ মিলিয়ন ইউএস ডলার বাজেটের এনিমেটেড চলচ্চিত্রটি ১ম সপ্তাহে আয় করে প্রায় ৫৬ মিলিয়ন ইউএস ডলার এবং সারা বিশ্বে মোট আয় করে প্রায় ৫৪৩ মিলিয়ন ইউএস ডলার।
আশা করি সর্বোচ্চ আয় করা নেটফ্লিক্সের সিনেমা তালিকার মধ্যে থেকে আপনারা হয়তো ইতো মধ্যেই দেখে ফেলেছেন। আর যাদি এখনও না দেখে থাকেন তবে দেখে ফেলুন তারাতারি। সবগুলো সিনেমাই আপনাদের ভল লাগবে
নেটফ্লিক্সে রিলিজড নতুন ডকুমেন্টরি ফ্লিমঃ সোশ্যাল ডিলেমা, প্রযুক্তির তৈরি বিলিয়ন ডলারের ফাঁদ! জেম্স বন্ড সিরিজের নতুন ফ্লিমের খবরঃ ‘No Time to Die (2020)’ বাংলা ট্রেইলার! 007 সিরিজের নতুন ধামাকা |