ব্যস্ততম পৃথিবীতে সবকিছুর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে আমরা সবকিছুই এখন পচ্ছন্দ করি ইন্সট্যান্ট। এরই ধারাবাহিকতয় খাবারের ক্ষেত্রেও তার ব্যাতিক্রম নয়। তাই সময় ও শ্রম বাচাতে প্রাপ্তবয়ষ্ক থেকে শুরু করে শিশু সকলের জন্যই বড়-ছোট সব খাবারের তালিকায় আমরা বেছে নেই ইন্সট্যান্ট নুডলস।
বিশেষ করে শিশুদের জন্য মায়েরা বেশি পছন্দ করেন এই খাবারটি, খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমন তৈরিতেও সময় লাগে কম। কিন্তু আমরা নিজেরা কল্পনাও করতে পারিনা এই ইন্সট্যান্ট এর ফাদে পরে শিশুসহ প্রাপ্তবয়ষ্ক সকলের শারিরীক ঝুঁকি কতটা বেড়ে চলেছে। এই ছোট্ট লেখাটির মাধ্যমে আপনাদের জানানোর চেষ্টা করবো কি কি ক্ষতিকর বিষয় রয়েছে এই মুখরোচক খাবারটিতে।
ইন্সট্যান্ট নুডলস এর ক্ষতিকর দিক
হঠাৎ করে এক বা দু-দিন যদি খাবারের তালিকায় এই খাবারটি থাকে তবে তেমন কোন সমস্যা নেই। আর যদি নিয়মিত খাবারের তালিকায় ইনস্ট্যান্ট নুডলস জায়গা করে নেয় তবে বেশ কিছু ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক এই খাবারের কিছু ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে ।
আরো পড়ুনঃ আপনার শিশুর মানসিক বিকাশ ঠিকমত হচ্ছে তো?
মিটবেনা ফাইবার আর প্রোটিনের চাহিদা
ইন্সট্যান্ট নুডলসে ফাইবারের পরিমাণ যেমন খুব কম থাকে ঠিক একইভাবে প্রোটিনের মাত্রাও থাকে কম। যার ফলে এই খাবারটি নিয়মিত গ্রহণে আপনার শরীরের ওজন বৃদ্ধি ঘটবে। আর ওজন বৃদ্ধির সাথে সাথে শরীরে দেখা দিতে পারে আরো বেশ কিছু আনুষাঙ্গিক সমস্যাও।
মেটাবলিক সিনড্রোম
মেটাবলিক সিন্ড্রোম হল এমন একটি অবস্থা যেখানে উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ পরিমাণ টাইগ্লিসারাইড, ডায়াবেটিস ও স্থূলতা একসঙ্গে হয়ে থাকে। ফলে এই খাবারটি আপনার শরীরে হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
ক্যান্সারের আশঙ্কা
ইন্সট্যান্ট নুডলস হজম হতে শরীর অনেক সময় নেয়। আর যদি তাড়াতাড়ি হজম হয়ে যায় তবে সে ক্ষেত্রেও বিপদ রয়েছে। যেমন, শরীরে ব্লাড সুগারের পরিমাণ এবং ইনসুলিনের পরিমাণে বৈষম্য করে দিতে পারে। কিন্তু দেখা যায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ইন্সট্যান্ট নুডলস হজম হতে শরীর দীর্ঘ সময় নেয়। ফলসরুপ এই খাবারের ইনগ্রিডিয়েন্স থেকে টক্সিক পদার্থ অনেক্ষন ধরে শরীরের মধ্যে নির্গত হতে থাকে। বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলে বিউটিলেটেড হাইড্রক্সিঅ্যানিসোল এবং টি-বিউটিলহাইড্রোকুইনন। এই মারাত্মক ক্ষতিকারক দু’টি যৌগ শরীরে দীর্ঘক্ষণ উপস্থিত থাকে, যা শরীরে ক্যান্সারের মতো অসুখের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে।
হৃদরোগের আশঙ্কা
ইন্সট্যান্ট নুডলস-এর মধ্যে লবণের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। আর এই লবণের বেশিরভাগ পরিমানটাই সোডিয়াম। ফলে যারা বেশি মাত্রায় এই জাতীয় নুডল খেয়ে থাকেন তাঁদের শরীরে লবণের মাত্রা দিনে দিনে বাড়তে থাকে, এবং বাড়তে থাকে রক্তচাপ। আর উচ্চ-রক্তচাপ বাড়িয়ে তোলে হার্ট ফেইলিওরের মত অনাকাংখিত পরিস্থিতির। তাই আমারা বলতে পারি ইনস্ট্যান্ট নুডলস সরাসরি হার্টের জন্য ক্ষতিকর।
আরো পড়ুনঃ হার্ট অপারেশন! সঠিক সময় কোনটি?
ভ্রণের খতির আশঙ্কা
যদিও চিকিৎসকরা অন্তঃসত্ত্বা নারীদের ক্ষেত্রে এই জাতীয় ইন্সট্যান্ট ফুড বা ফাস্ট ফুড খাওয়া একেবারে নিষেধ করে থাকেন। তবে যারা না জেনে গর্ভাবস্থায় এই জাতীয় নুডলস নিয়মিত গ্রহণ করেন, তারা নিজেদের ক্ষতি ছাড়াও ভবিষ্যৎ সন্তানেরও ক্ষতির সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলছেন। কারন, ইন্সট্যান্ট নুডুলসের ব্যবহৃত ইনগ্রিডিয়েন্সে থাকা টাক্সিক পদার্থ ভ্রুণের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
ওবেসিটি বা স্থুলতা
ইনস্ট্যান্ট নুডলস-এ থাকে মোনোসোডিয়াম গ্লুটামেট (এমএসজি) বা টেস্টমেকার। অনেক ইনস্ট্যান্ট খাবারেই এই লবণ ব্যবহার করা হয়। খাবারের গন্ধ এবং স্বাদ ভালো করার জন্য ব্যবহার করা হয় এই টেস্টমেকার। এটি শরীরের জন্য ক্ষতিকারক নাকি ক্ষতিকারক নয় তা নিয়ে বেশ বিতর্ক রয়েছে।
কিন্তু এটা নিয়ে কোনও বিতর্ক নেই যে, দীর্ঘ সময় ধরে শরীরে এমএসজির উপস্থিতি ওজন বৃদ্ধি ঘটায়। অবশ্য চিকিৎসকরাও সেই সব রোগীদের এমএসজি দেন যারা দুর্বলতা বা কম ওজন সমস্যায় ভুগছেন। কারণ ওষুধ হিসেবে এই যৌগ পদার্থটি ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। তাই ইনস্ট্যান্ট নুডলস দীর্ঘদিন ধরে গ্রহণ করলে ওজন বাড়ে যেতে পারে।
শেষ কথা
ব্যস্ততার মাঝেও শরীরটা কিন্তু আগে, যদি সুস্থ্য থাকেন তবেই না পরিশ্রম করবেন। থাকলে এই জাতীয় নুডলস যতটা পারা যায় খাবারের তালিকা থেকে বাদ দেওয়াই শ্রেয়। আর একান্তই খেতে হলে টেস্টমেকারটা বাদ দিয়ে কিছু সবজি এড করে একটু হেলদি ভাবে তৈরি করে খাওয়া যেতে পারে। আর মায়েদের জন্য পরামর্শ থাকবে বচ্চাদের খাবারের তালিকায় এই জাতীয় ইনস্ট্যান্ট খাবার না রাখাই শ্রেয়।।