কুমার নদ কে কেন্দ্র করে শুধু আলমডাঙ্গা নয় আরো অনেক জনপদ গড়ে উঠেছিল। কিছু কিছু ঐতিহাসিক দলিল থেকে জানা যায় প্রাচীন ভারতীয় রাষ্ট্র গঙ্গাঋদ্ধির রাজধানী গাঙ্গে এই নদের পাড়ে অবস্থিত ছিল। মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান তাঁর ‘গঙ্গাঋদ্ধি থেকে বাংলাদেশ’ বইতে সরাসরি বলেছেন গাঙ্গে নগরীর অবস্থান ছিল কুমার নদের তীরে (১)।
টলেমির মানচিত্রে গঙ্গা নদীর পাঁচটি মুখের দেখা মেলে।
সেগুলো হচ্ছেঃ
- Kambyson,
- Kamberikhon,
- Psendostoman, &
- Antibole।
স্যার রমেশ চন্দ্র মজুমদার তাঁর ‘দ্যা হিস্ট্রি অব বেঙ্গল’ বইতে Kamberikhon (যার সংস্কৃতি ভাষায় উচ্চারণ কৌম্বারাকা) এর রূপান্তর দেখিয়েছেন এইভাবেঃ
- কৌম্বারাকা>
- কৌমারাকা>
- কুমারাকা>
- কুমারা>
- কুমার।
এই কুমার নদ টি এখন মাথাভাঙ্গা নদীর শাখা হিসাবে প্রবাহিত হয়ে গড়াই নদীকে ছুয়ে হরিণঘাটা এবং আড়িয়াল খাঁ নদীতে মিশেছে। (২)
অল্প কয়েকজন ঐতিহাসিক অবশ্য Kamberikhon কে ‘কপোতাক্ষ নদ’ বলে চিহ্নিত করেছেন। কিন্তু বেশীরভাগ ঐতিহাসিক এটাকে ‘কুমার নদ’ বলে জোরালো মত দিয়েছেন। তাঁদের মতে Kamberikhon এর অপভ্রংশ নামই হচ্ছে কুমার নদ। কুমার নদের আরেকটি নাম হচ্ছে পাঙ্গাসী বা পাংসী।
কুমার এবং পাঙ্গাসী বা পাংসী (মরা গাঙ?) নামের অর্থ কি সেই বিষয়ে একটু আলো পাওয়া যায় ১৮৭১ সালে প্রকাশিত The Statical Accounts of Jessore এর ১৭২ পাতায়। সেখানে এই নদের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে- ‘Kumer (the young prince), or Pangashi (the pale one), a branch of the Nadia river Mathabhanga’। (৩)

সনাতন ধর্মে গঙ্গা নদীকে দেবী গঙ্গার একটা রূপ হিসাবে দেখা হয়। তাই গঙ্গা নদীর শাখা হিসাবে এটাকে গঙ্গা দেবীর পুত্র বা কুমার হিসাবে হিসাবে দেখা হতো কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায় না। আবার পাঙ্গাস মাছের প্রাচুর্যের কারণে, না এর স্বচ্ছ জলপ্রবাহের কারণে, না পাংসী নামের কোন জলপ্রবাহ কুমারের সাথে বিলীন হয়ে যাওয়ার ফলে এই নদের কিছু অংশকে পাঙ্গাসী বা পাংসী বলে ডাকা হতো- এই বিষয়ে স্থির সিদ্ধান্তে আসা যায় না।
কারণ অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী তথ্য সামনে এসে পড়ে। এই নদের আদি প্রবাহ নিয়ে আলোচনা পড়তে গিয়ে একটি জটিলতা সামনে এল। এই জটিলতা নিয়ে এল রেনেলের মানচিত্র A Bengal Atlas এবং ১৯২৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত Notes on the Physical Geography of Bengal নামের একটি বই ।
বইটিতে রেনেলের মানচিত্র A Bengal Atlas’এ আঁকা বিভিন্ন নদ-নদীর বিবরণ রেনেলের দিনপঞ্জি, মেমোয়ার এবং চিঠিপত্রের আলোকে বিশ্লেষণ করা হয়। সেখানে কুমার নদের (The Comer Creek ) বিবরণ এসেছে এ’ভাবেঃ
“150. Map- XI.- This river left the Ganges at Mayescunda (below Jellinghy village) and its course described below from Mayescunda Eastwards and Southward until the creek meets the Ganges below Hobbygunge. [The earlier part of the Comer is now known as the Mathabhanga]. (৪)”
এই বিবরণ অনুযায়ী আদি কুমার নদটায় এখন মাথাভাঙ্গা হিসাবে পরিচিত। মাথাভাঙ্গা নদীর আদি গতিপথের একটি বিবরণ ঐ বইতে পাওয়া যা বর্তমান মাথাভাঙ্গার গতিপথের সাথে একেবারেই মেলে না। সেটা নিয়ে আরেকদিন আলোচনা করা যাবে।
আরো পড়ুনঃ |
---|
ঘোলদাড়ি মসজিদ; বৃহত্তর কুষ্টিয়া অঞ্চলের প্রথম মুসলিম নিদর্শণ! হায়া সোফিয়া, আর্কিটেকচারের ইতিহাস পরিবর্তনকারী একটি স্থাপনা। |
সুত্রঃ
- (১) মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান, গঙ্গা ঋদ্ধি থেকে বাংলদেশ, পৃষ্ঠাঃ ৯;
- (২) Ramesh Chandra Majumdar, The History of Bengal, Page: 12;
- (৩) Statistical Accounts of Jessore- 1871;
- (৪) Notes on the Physical Geography of Bengal, Page no: 63.