আপনাকে প্রতি অর্থবছরের আয়কর বিবরণী বা Tax return form অবশ্যই জমা দিতে হবে। আর এই আয়কর বিবরণী ফরম বা Tax return form দাখিলের সময় ব্যক্তি-শ্রেনী করদাতাগন না জানার কারনে কিছু সাধারণ ভূল করে থাকেন। যেই ভূলগুলোর জন্য পরবর্তীতে করদাতাদের কখনও কখনও বড় মাপের ক্ষতির মুখে পড়তে হয়।
তবে শুরুতেই যদি একটু সাবধানতা অবলম্বন করা যায় অথবা ভুলগুলো সম্পর্কে ধারনা থাকে তবে এই অনাকাংখিত ক্ষতি এড়ানো সম্ভব। আসুন আয়কর বিবরণী বা ট্যাক্স রিটার্ন দাখিলের ক্ষেত্রে সাধারণ ভুলগুলো সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
আয়কর বিবরণী (Tax return form) কী?
আয়কর বিবরণী (Tax Return form) একটি ফরম যার মাধ্যমে আপনি বাংলাদেশ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে আপনার বাৎসরিক আয়ের সংক্ষিপ্ত বিবরণ উপস্থাপন করবেন। বাংলাদেশ সরকারের আয়কর বিধি দ্বারা আয়কর রিটানের কাঠামো নির্দিষ্ট করা আছে।
বাংলাদেশ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওয়েবসাইট থেকে আয়কর বিবরণী ফরম (Tax Return form) ডাউনলোড করে নিতে পারবেন অথবা আয়কর অফিস থেকে ও বিনামূল্যে এটি সংগ্রহ করা যায়। ফরমটি ফটোকপি করেও ব্যবহার করতে পারবেন।
আয়কর বিবরণী ফরম (Tax return form) ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন।
আয়কর বিবরণী (Tax return form) দাখিলে যেসব ভুল
ব্যক্তি-শ্রেনীর আয়কর বিবরণী (tax return form) দাখিলের ক্ষেত্রে করদাতারা যে সমস্ত ভূল কর্মকান্ডগুলো করে থাকে সেগুলো নিচে সংক্ষেপে আলোচনা করা চেষ্টা করছি।
আয়কর প্রদানে অনীহা
ব্যক্তি-শ্রেনীর করদাতাগনের মধ্যে প্রথম যে প্রবণতাটি লক্ষ করা যায় ত হচ্ছে আয়কর প্রদান করতে অনীহা। করযোগ্য আয় থাকুক বা না থাকুক। করযোগ্য আয় থাকলে এবং টিআইএন থাকলে আইনে রিটার্ন প্রদানে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু করদাতাগন এই রিটার্ন প্রদানেই অনিচ্ছুক হয়ে প্রকৃতপক্ষে আয়কর অধ্যাদেশের বিভিন্ন ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করে বসেন।
আয়কর প্রদান বলতে সর্বনিম্ন কর প্রদানকে বোঝেন
অনেক করদাতাগন কর প্রদান বলতে সর্বনিম্ন প্রদেয় কর কেই বোঝেন। অর্থাৎ ৫০০০/৪০০০/৩০০০ টাকা। অনেক সময় নিজে নিজেই আয়কর বিবরণী ফরম পূরণ করতে গিয়ে বড় মাপের ভুল করে বসেন। এর কারনে করদাতার প্রকৃত আয় প্রদর্শিত হয় না। ফলে কোন কারনে ফাইল অডিটে পড়লে করদাতার তার আয়ের স্বপক্ষে কাগজ পত্র দাখিল করতে ব্যর্থ হন এবং অস্বাভাবিক জরিমানার মুখে পড়েন।
আয়কার বিবরণী তে সকল সম্পদ এবং দায় ঘোষনা না করা
মিনিমাম কর (৫০০০/৪০০০/৩০০০) প্রদান করতে গিয়ে করদাতাগন তাদের এত দিনের অর্জিত সম্পদসমূহ রিটার্নে প্রদর্শন করা থেকে বিরত থাকনে। অজ্ঞতাবশত সকল সম্পদ এবং দায় উল্ল্যেখ না করার ফলে করদাতাগনের অর্জিত সম্পদ সমূহ কালো টাকায়/অপ্রদর্শিত আয়ে রূপান্তর হয়। ফলে পরবর্তীতে উক্ত সম্পদ সমূহের ধারাবাহিকতা রক্ষা কষ্টকর হয়ে পড়ে এবং পরবর্তিতে অধিকহারে জরিমানা/কর প্রদান করে উক্ত সম্পদ বৈধ করতে করদাতাগন বাধ্য হন।
আয়কার বিবরণীর সাথে ব্যাংক বিবরনী/ঋন বিবরনী দাখিল না করা
অনেক সময় করদাতাগন আয়কর বিবরণীর সাথে তাদের ব্যাংক হিসাব বিবরনী/ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋন হিসাব সমূহের বিবরনী দাখিল করা থেকে বিরত থাকেন। ফলে ডিসিটি উক্ত করদাতার আয় সম্পর্কে তথ্য ঘাটতিতে পড়েন। ফলশ্রুতিতে তথ্যের জন্য করদাতাকে তলব করতে পারন।
ব্যাংক হিসাব বিবরনীর সাথে আয়ের মিল না থাকা
করদাতাগন যে ব্যাংক হিসাব বিবরনী দাখিল করেন/করেছেন তার সাথে ঘোষিত আয়ের অমিল হলে আপনার ফাইলটি ডেপুটি কমিশনার অব ট্যাক্সেসের (DCT) ইচ্ছানুযায়ী অডিটে পড়তে পারে। সেক্ষেত্রে পরবর্তীতে উক্ত অমিল সমূহের কারন উদ্ঘাটন পূর্বক কর জরিমানা সহকারে পূনঃনির্ধারণ করা হতে পারে।
ব্যক্তির ব্যয়ের সাথে আয়ের মিল না থাকা
ধরা যাক করদাতা থাকেন ধানমন্ডিতে কিন্তু তিনি বছরে ব্যয় হিসেবে ঘোষনা করেছেন ২,০০,০০০ টাকা মাত্র। উনার স্ত্রী কোন উপার্জন করেন না এবং উনার দুইজন সন্তান রয়েছে যারা স্কুলে পড়াশোনা করে। তাহলে এই ব্যয় হিসাবটি কতটা যুক্তিযুক্ত?
এখানে দেখা যাচ্ছে যদি ধানমন্ডিতে একটি এক-কক্ষের বাসা ভাড়ার হিসেবও ধরি (যদিও তা পাওয়া খুব কঠিন) তাতেও মাসে বাড়ি ভাড়াই আসে কমপক্ষে ১০,০০০/- টাকা। সেই হিসেবে উক্ত করদাতা কারেন্ট, গ্যাস, পানির হিসেব বাদে শুধুমাত্র বাড়ি ভাড়াই প্রদান করেন বছরে প্রায় ১,২০,০০০/- টাকা।
দুই সন্তানের পড়াশনার খরচ প্রতি মাসে কমপক্ষে ৬,০০০/- টাকা (যদিও বর্তমান সময়ে এতো কমে সম্ভব নয়) টাকা হিসাবে বছরে খরচ ৭২,০০০/- টাকা। অর্থাৎ শুধুমাত্র বাড়ি ভাড়া এবং বাচ্ছাদের স্কুলের খরচই প্রায় দুই লাখ টাকার কাছাকাছ।
এর পরে রয়েছে চিকিৎসা, যাতায়াত, উৎসব খরচ, খাদ্য সহ অন্যান্য খরচ, সেগুলো বাদই রাখলাম। এক্সেত্রে ডেপুটি কমিশনার অফ ট্যাক্সেস (DCT) চাইলেই উক্ত ফাইলটিকে অডিটের আওতায় নিয়ে আসতে পারেন। যা করদাতার জন্য হয়রানির সৃষ্টি করবে তা বলাই বাহুল্য।
ব্যাংক বহির্ভুত চ্যানেলে রেমিটেন্স আনয়ন
ব্যাংক বহির্ভূত চ্যানেলে রেমিটেন্স দেশে নিয়ে আসলে উক্ত অর্থের উপর করা প্রদানের বাধ্যবাধকতা
রয়েছে। ফলে অনেকেই উক্ত অর্থ প্রদর্শন করেন না। ফলে উক্ত অর্থে ক্রয়কৃত সম্পদ সমূহও প্রদর্শন
করতে ব্যর্থ হন।
সর্বপরি
উপরোক্ত বিষয় ছাড়াও সঠিকভাবে আইন অনুযায়ী আয়কর বিবরণী (Tax return form) তৈরি জন্য অভিজ্ঞ কারো পরামর্শ গ্রহন করদাতাগনের জন্য অবশ্যই ভালো ফলাফল নিশ্চিত করবে।
আরো পড়ুনঃ হোটেল সোনারগাঁও ঢাকা; দেশের প্রথম ৫ তারকা হোটেল!
তথ্যসূত্রঃ
Tax Return
E-mail: [email protected]
Phone: 01811-878760