COVID-19 পরিস্থিতি মোকাবেলাতে অক্সিজেন এবং অক্সিজেন থেরাপি প্রসঙ্গটি বার বার ঘুরে ফিরে আসছে। শুধু COVID-19 চিকিৎসাতেই নয়, অন্যান্য যে কোন জরুরী স্বাস্থ্য সমস্যায় প্রয়োজন হতে পারে অক্সিজেন সাপোর্ট। অক্সিজেন থেরাপি কি এবং কেনই বা প্রয়োজন হয় এবং অক্সিজেন থেরাপির পদ্ধতি সহ আরো যে সকল গুরুত্বপূর্ন বিষয়গুলো আছে তা আলোচনা করা হয়েছে এই লেখাটিতে।
অক্সিজেন (Oxygen) কি
বাতাসের অন্যতম একটি উপাদানের নাম অক্সিজেন বা অম্লযান যা আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। বাতাসে মুক্ত অবস্থায় অক্সিজেন একটি রঙ এবং গন্ধ হীন রাসায়নিক মৌল যা তরল অবস্থায় হালকা নীল বর্ণ ধারণ করে। অক্সিজেনের সংকেত ‘O’ এবং পারমাণবিক সংখ্যা ’৮’।
বাতাসে রয়েছে মোটামুটিভাবে ২১% অক্সিজেন, ৭৮% নাইট্রোজেন, ০.০৪% কার্বন ডাই অক্সাইড, সামান্য কিছু আরগন, হিলিয়াম আর জলীয় বাস্প। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪৮০ কিলোমিটার উচ্চতায় বাতাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও এর বেশীরভাগই রয়েছে ১৬ কিলোমিটারের মধ্যে।
আমরা যখন শ্বাস গ্রাহন করি তখন বাতাসের অক্সিজেন শরীরের কার্বন এবং হাইড্রোজেন উপাদানের সাথে গিয়ে মেশে । এবং ছেড়ে দেওয়া নিশ্বাসের সাথে কার্বন এবং অক্সিজেনের যৌগ হয়ে বেরিযে যায়, যাকে আমরা বলে থাকি কার্বন ডাই অক্সাইড। এই কার্বন ডাই অক্সাইড উদ্ভিদ গ্রহণ করে এবং সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে বাতাসে আবার অক্সিজেন ছেড়ে দেয়।
অক্সিজেন নিজে জ্বলেনা কিন্তু আগুন জ্বলতে সাহায্য করে। শরীরের ভিতর যে বিপাক প্রক্রিয়া চলছে, তাতেও হজমকৃত খাবারকে আস্তে আস্তে পোড়ানো হয়। এতে অক্সিজেন লাগে আর ফলশ্রুতিতে কার্বন ডাই অক্সাইড তৈরি হয়।
তাছাড়া, শরীরের অভ্যন্তরে ফুসফুসের মধ্যে গ্যাসের বিনিময়, এর ভিতর রক্ত সঞ্চালন, শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রন, বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গের বিপাক প্রক্রিয়া ও এর রক্ত সরবরাহ সহ গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে থাকে অক্সিজেন।
আরো পড়ুন |
---|
করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষায় ব্যবহৃত যত ভ্যাকসিন জরুরী এয়ার অ্যাম্বুলেন্স (Air ambulance) ও হেলিকপ্টার সেবা! রোগ নির্ণয়ে মেডিকেল ইমেজিং |
অক্সিজেন থেরাপি কি
যখন বাতাসের ২১% অক্সিজেন শরীরের অভ্যন্তরের অক্সিজেনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তখন পরিপূরক হিসাবে যে অতিরিক্ত অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়, তাকেই অক্সিজেন থেরাপি বা সাপ্লিমেন্টাল অক্সিজেন থেরাপি (Supplemental Oxygen Therapy) বলা হয়ে থাকে।
অর্থাৎ, ফুস্ফুস বা হার্ট ক্ষতিগ্রস্থ হলে অথবা রক্তের কোন সমস্যার কারণে শরীরে অক্সিজেন স্বল্পতা দেখা দিতে পারে তখন জরুরী অক্সিজেন সাহায়তার প্রয়োজন হয়। আবার কখনও কোথাও বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ যদি এতটাই কমে যায় যে, তা বেচে থাকার জন্য পর্যাপ্ত নয়, তখনও অতিরিক্ত অক্সিজেনের প্রয়োজন হয়। এই অতিরিক্ত অক্সিজেন ব্যবস্থাকেই বলা হয় অক্সিজেন থেরাপি।
কেন অক্সিজেন থেরাপি প্রয়োজন হয়
এখানে আমাদের দুটো জিনিসের পার্থক্য বুঝতে হবে। একটা হচ্ছে ভেন্টিলেশন (Ventilation), আর একটা হচ্ছে গ্যাস বিনিময় (Gas Exchange)। ভেন্টিলেশন নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে ব্রেইন, স্পাইনাল কর্ড, শ্বাসযন্ত্রের মাংসপেশি, ফুস্ফুস ইত্যাদির মাধ্যমে।
হঠাৎ করে কোন ড্রাগের প্রভাব, বিষক্রিয়া বা স্ট্রোকের কারনে ব্রেইনের কাজ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। স্পাইনাল কর্ড বা এর নার্ভের কাজ নষ্ট হয়ে যেতে পারে অথবা মাংসপেশির কাজ ব্যহত হওয়া সহ শ্বাস ক্রিয়া অচল হওয়ার সম্বাবনা দেখা দিতে পারে। এক্ষেত্রে জীবন বাচানোর জন্য যেটি প্রয়োজন হয় সেটিই হচ্ছে ভেন্টিলেশন। ভেন্টিলেশন দেওয়ার নানা রকম পদ্ধতি রয়েছে। যেমনঃ
- মুখ দিয়ে শ্বাস দেওয়া
- আম্বু (AMBU, air mask breathing unit) ব্যাগ দিয়ে স্বাস দেওয়া
- গলায় টিউব দিয়ে স্বাস দেওয়া
- ট্রাকিওস্টোমীর মাধ্যমে কৃত্রিম শ্বাস দেওয়া
ভেন্টিলেশন এসিস্টেড অথবা মেকানিক্যাল হতে পারে। কোন কোন সময় উভয় প্রক্রিয়া একইসাথে চলতে পারে, অর্থাৎ মেকানিক্যাল ভেন্টিলেশনের মাধ্যমে সাপ্লিমেন্টাল অক্সিজেন থেরাপি দেওয়া হতে পারে।
মোটামুটিভাবে COPD (Chronic obstructive pulmonary disease), নিউমোনিয়া, মারাত্মক ধরনের অ্যাজমা, করোনায় ফুসফুস আক্রান্ত হলে, হার্ট ফেইলিওর হয়ে ফুসফুসের কাজ ব্যাহত হলে, পুড়ে যাওয়ার ফলে শ্বাসতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্থ হলে অক্সিজেন থেরাপির প্রয়োজন হয়।
সাধারনত হার্টের ভিতর ছিদ্র থাকার ফলে যদি বাম থেকে ডানে রক্তসরবরাহ বেশি হয়, তবে অক্সিজেন থেরাপি কাজ করে, আর ডান থেকে বামে রক্তসরবরাহ বেশি থাকলে, অক্সিজেন থেরাপি তেমন কাজ করে না, তবে প্লাজমায় দ্রবীভূত অক্সিজেন কিছুটা উপকারে আসে।
এছাড়াও কিছু রোগ যেমন সিস্টিক ফাইব্রোসিস (Cystic Fibrosis), ফুসফুসের ফাইব্রোসিস (Lung Fibrosis), স্লীপ এপ্নিয়া (Sleep apnoea) রোগে অক্সিজেন থেরাপির প্রয়োজন হয়।
কখন প্রয়োজন অক্সিজেন থেরাপি?
সাধারনভাবে, রোগীর শ্বাসকষ্ট হলে, শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি অতিশয় বৃদ্ধি পেলে, ক্লান্তি অনুভব করলে, হাত, পা, ঠোট ইত্যাদি নীল হয়ে গেলে, রক্তচাপ বেড়ে গেলে, অতিরিক্ত শ্বাস কষ্টের জন্য ঘাম হলে আমরা বুঝি শরীরে অক্সিজেনের পরিমান কম আছে।
পালস অক্সিমিটার নামক ছোট্ট যন্ত্রটি হাতের বা পায়ের আঙ্গুলে অথবা কানের লতিতে লাগিয়ে রক্তে অক্সিজেনের পরিমান নির্ধারণ করা যায়।
এই অক্সিজেন স্যাচুরেশন (Oxygen Saturation, Normal 98-100%) ৯৪% এর নীচে নেমে আসলে তখন অক্সিজেন থেরাপি প্রয়োজন হয়। এছাড়া বিশেষ ক্ষেত্রে ধমনীর থেকে রক্ত নিয়ে (ABG, Arterial blood gas) তা পরীক্ষা করেও রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা নিরূপণ করা যায়।
কিভাবে দেবেন অক্সিজেন থেরাপি?
জরুরী প্রয়োজনে অক্সিজেন থেরাপি দিতে বেশ কিছু ডিভাইস রয়েছে যেগুলোর সাহায্য নেওয়া হয়। এর মধ্যে কিছু আছে যেগুলোর মধ্যে আগে থেকে অক্সিজেন রিজার্ভ করে রাখা হয় আবার কিছু ডিভাইস আছে যেগুলোর মাধ্যমে বাতাস থেকেই সরাসরি অক্সিজেন তৈরি করে রোগীকে প্রদান করা হয়। নিচে পর্যায়ক্রমে সবগুলো ডিভাইস বা মধ্যম নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
ক) অক্সিজেন কনসেনট্রেটর (Oxygen concentrator)
এই অক্সিজেন কনসেনট্রেটর যন্ত্রটি বাতাস থেকে সরাসরি অক্সিজেন তৈরি করতে সক্ষম এবং কোনরকম বিরতি ছাড়াই একটানা অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে। যন্ত্রটি প্রথমে বাতাসে থাকা অক্সিজেন সংগ্রহ করে ঘনীভূত করে এবং রোগীকে ন্যাজাল ক্যানুলার মাধ্যমে প্রদান করে।
অক্সিজেন কনসেনট্রেটর সাহায্যে সাধারণত মিনিটে ৫ থেকে ১০ লিটার পর্যন্ত অক্সিজেন রোগীকে সরবরাহ করা যায়। হাসপাতালে যে কনসেনট্রেটর ব্যবহার করা হয়ে সেগুলো আকারে বড়, আর বাড়িতে ব্যবহারের জন্য ছোট যন্ত্র ব্যবহার করা হয়। কনসেনট্রেটর ডিভাইসগুলো চলতে পারে ব্যাটারী অথাবা সরাসরি বিদুতের সাহায্যে।
অক্সিজেন কনসেনট্রেটরের দাম এবং কোথায় পাবেন?
বাজারে বেশকিছু কোম্পানির বিভিন্ন ধারনক্ষমতার অক্সিজেন কনসেনট্রেটর রয়েছে। যেগুলো আপনি অনলাইনে এবং সরাসরি দোকান থেকে যোগাযোগ করে কিনতে পারবেন। অনলাইনে ক্রয়ের ক্ষেত্র ঢাকার মধ্যে কোম্পানিগুলো ফ্রি ডেলিভারী ও ইন্সটলেশন সুুবিধা দিয়ে থাকে। আর ঢাকার বইরের জন্য মুল দামের সাথে যোগ হেবে ডেলিভারী খরচ।
মিনিটে ৫ লিটার অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে এমন ধারণক্ষমতার একটি কনসেনট্রেটরের দাম পড়বে কোম্পানিভেদে ২৫ হাজার টাকা থেকে ৪৫ হাজার টাকার কাছাকাছি। আর মিনিটে ১০ লিটার অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে এমন ধারন ক্ষমতার একটি কনসেনট্রেটরের দাম পড়বে কোম্পানিভেদে ৫০ হাজার টাকা থেকে এক লক্ষ টাকার উপরে। আর সাথে পাবেন ১ থেকে ২ বছরের ওয়ারেন্টি।
খ) অক্সিজেন সিলিন্ডার (Gas cylinder)
কম্প্রেসড গ্যাস সিলিন্ডার (Compressed gas cylinder) বা অক্সিজেন সিলিন্ডার গুলো লোহার তৈরি একটি বিশেষ পাত্র যা বড় ও ছোট দুরকম আকৃতিরই হয়ে থাকে। এখানে উচ্চ চাপে সিলিন্ডার বা পাত্রের মাধ্য অক্সিজেন মজুদ রাখা হয়। যেখান থেকে সরাসরি রোগীকে অথবা কেন্দ্রীয় ব্যবস্থায় অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়।
অক্সিজেন সিলিন্ডারের দাম এবং কোথায় পাবেন?
জরুরী ব্যবহারের জন্য এই সিলিন্ডারগুলো ভাড়া দিয়ে থাকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। আপনার প্রয়োজনে তাদের কাছে থেকে সংগ্রহ করতে পারেন। আবার আপনি চাইলে পরিবারের জন্যও কিনে রাখতে পারেন। সেক্ষেত্রে ব্যবহারের পরে আবার রিফিল করার প্রয়োজন হবে। সিলিন্ডারগুলো কয়েকটি সাইজের হয়ে থাকে। সাইজ, ধারণক্ষমতা ও প্রস্তুতকারক কোম্পানিভেদে ৮ হাজার টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
অক্সিজেন সিলিন্ডার এখন অফলাইনের সাথে সাথে অনলাইনেও কিনতে পাওয়া যাচ্ছে। অনলাইনে ক্রয়ের ক্ষেত্র ঢাকার মধ্যে কোম্পানিগুলো ফ্রি ডেলিভারী ও ইন্সটলেশন সুুবিধা দিয়ে থাকে।
গ) তরল অক্সিজেন (Liquid Oxygen)
অক্সিজেনকে -৩০০০ সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় তরলীভূত করে সংরক্ষন করা হয় এবং সেখান থেকে প্রয়োজনমত সিলিন্ডার বা কেন্দ্রীয় লাইনে সরবরাহ করা হয়।
ঘ) কেন্দ্রীয় অক্সিজেন সাপ্লাই (Central Oxygen Supply)
এখানে হাসপাতালের একটা বিশেষ স্থানে তরল অক্সিজেন মজুদ করে রাখা হয়, সেখান থেকে পাইপের মাধ্যমে রোগীকে প্রয়োজনমত অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়। অক্সিজেন সরবরাহকারী সংস্থাগুলো মজুদ শেষ হবার আগেই আবার তরল অক্সিজেন এখানে মজুদ করে দেয়। এই ব্যবস্থার জন্য আলাদা আলাদা সিলিন্ডারের কোন প্রয়োজন হয়না।
অক্সিজেন থেরাপি দেওয়ার বিভিন্ন কৌশল
বিভিন্ন পদ্ধতিতে অক্সিজেন থেরাপি দেওয়া হয়ে থাকে। এর ভিতর কোন কোন পদ্ধতি ব্যবহার করে বাড়িতে থেকেও দেওয়া সম্ভব। আবার কোন কোন পদ্ধতি শুধুমাত্র হাসপাতালেই দেওয়া সম্ভব।
সাধারণত রোগীকে দুই ধরনের অক্সিজেন থেরাপি দেওয়া হয়ে থাকে। যথাঃ
- লো ফ্লো এর অক্সিজেন (Low flow Oxygen)
- হাই ফ্লো অক্সিজেন ( High flow Oxygen)
ক) লো ফ্লো অক্সিজেন
লো ফ্লো অক্সিজেন থেরাপি দুই রকমভাবে রোগীকে দেওয়া যায়, যথাঃ ন্যাজাল ক্যানুলার মাধ্যমে এবং ফেস মাস্কের সাহায্যে। আসুন জেনে নেওয়া যাক এই দুটি পদ্ধতি সম্পর্কে।
১. ন্যাজাল ক্যানুলার মাধ্যমে অক্সিজেন থেরাপি
ন্যাজাল ক্যানুলার মাধ্যমে অক্সিজেন থেরাপি দেওয়ার সুবিধা হলো যে, রোগী অক্সিজেন চালু অবস্থায় কথা বলতে বা খাওয়া –দাওয়া করতে পারে। এই পদ্ধতিতে ১-৪ লিটার/মিনিট , ২৪-৪০%, অক্সিজেন দেওয়া যায়। এবং একই সাথে হিউমিডিফাইয়ারের মাধ্যমে জলীয় বাস্প যোগ করে দিলে নাক বা গলা শুকিয়ে যাবেনা।
২. ফেস মাস্কের সাহায্যে অক্সিজেন থেরাপি
রকমভেদ অনুযায়ী ফেস মাস্কের সাহায্যে ৬-১০ লিটার/মিনিট, ৪০-৬০% অক্সিজেন দেওয়া যায়। নন-ব্রিদার মাস্ক (৬০-৮০%, ১০-১৫ লিটার/মিনিট), আংশিক রি-ব্রিদার মাস্ক (৮০-৯০%, ১০-১২লিটার/মিনিট) ইত্যাদি ব্যবহার করে বিভিন্ন মাত্রায় অক্সিজেন দেওয়া যায়।
খ) হাই ফ্লো অক্সিজেন
ভেঞ্চুরি মাস্ক ব্যবহার করে ২৪-৬০% অক্সিজেন, মিনিটে ৪-১২লিটার, ট্রান্স ট্রাকিয়াল ক্যাথেটার ব্যবহার করে ৬০-১০০%, .২৫-৪ লিটার/মিনিট অক্সিজেন দেওয়া যায়। এছাড়াও বিভিন্ন ডিভাইসের মাধ্যমে বেশী মাত্রার অক্সিজেনও প্রয়োগ করা যায়।
হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা ব্যবহার করে ৬০ লিটার/মিনিট হিউমিডিফায়েড অক্সিজেন দেওয়া সম্ভব। বর্তমানে কভিড-১৯ ইনফেকশনে এই পদ্ধতির বহুল ব্যবহার হয়েছে।
গ) নন-ইনভাসিভ ভেন্টিলেশন
হাই ফ্লো অক্সিজেন ছাড়াও প্রোণ পজিশনে শ্বাস-প্রশ্বাসের (Prone Ventilation) মাধ্যমে অথবা শ্বাস নালীতে বিভিন্ন পর্যায়ে চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে (CPAP- Continuous positive airway pressure), (BiPAP- Biphasic positive airway pressure) রোগীকে ইন্টিউবেট না করেই অক্সিজেনের ঘাটতি পূরণ করা যায়।
তবে এক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অসুবিধা হল, রোগীর ব্যবহৃত মাস্কটাকে অত্যন্ত শক্তভাবে নাক-মুখের সঙ্গে আটকিয়ে রাখতে হয়, যা রোগীর জন্য অত্যন্ত অস্বস্তিকর। তবে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা ব্যবহার করলে এই অসুবিধাগুলি আর থাকে না।
ঘ) ইনভ্যাসিভ ভেন্টিলেশন
কৃত্রিম শ্বাস যন্ত্রের মাধ্যমে এই ধরনের অক্সিজেন থেরাপি প্রয়োগ করা হয়। বিভিন্ন মোডে আর প্রকারভেদে বিভিন্ন বয়সের রোগীকে এই ধরনের কৃত্রিম শ্বাস প্রয়োগ করা হয়। এটা লাইফ সাপোর্ট এর একটা অংশ।
ঙ) হাইপারবেরিক অক্সিজেন
হাইপারবেরিক অক্সিজেন চেম্বারে সাধারন বায়ু চাপের থেকে বেশী মাত্রায় চাপ প্রয়োগ করা হয়। এই চেম্বারে ১০০% অক্সিজেনের মাধ্যমে অক্সিজেন এনেরোবিক ইনফেকশন, বেড সোর, কার্বন মনাক্সাইড পয়জনিং এর চিকিৎসা করা হয়।
অক্সিজেনের বিষক্রিয়া (Oxygen Toxicity)
COVID-19 পরিস্থিতিতে অক্সিজেনের ব্যবহার যেমন বেড়েছে, সাথে সাথে অক্সিজেন ব্যবহারের বিষক্রিয়াও দেখা যাচ্ছে অনেক। মাত্রাতিরিক্ত অক্সিজেনের ব্যবহার, বিশেষ করে প্রয়োজন ছাড়াই হাই ফ্লো অক্সিজেনের ব্যবহার অক্সিজেন বিষক্রিয়া আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
অক্সিজেন ব্যবহারে সতর্কতা
COVID-19 ইনফেকশনে বিভিন্ন কারনে ফুস্ফুসের ক্ষতি হয়ে থাকে, প্রয়োজনের অতিরিক্ত অক্সিজেন ব্যবহারে ফ্রি রেডিক্যাল তৈরি হয়ে ফুসফুসের এল্ভিওলাইগুলি ধ্বংস করে দেয়। পরবর্তীতে ফুসফুসের প্রদাহ এবং ফাইব্রোসিস হয়ে রোগী মারা যেতে পারে। তাই অক্সিজেন থেরাপিতে বা অক্সিজেন ব্যবহারে সতর্কতা প্রয়োজন।
অক্সিজেন থেরাপি বা অক্সিজেন ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো অবশ্যই বিবেচনা করা উচিতঃ
- নির্দিষ্ট প্রয়োজন ছাড়া অক্সিজেন থেরাপি দেওয়া উচিৎ নয়।
- মাত্রাতিরিক্ত অক্সিজেন প্রয়োগ সঠিক নয়।
- চিকিৎসকের পরামর্শ এবং তত্বাবধানে অক্সিজেন থেরাপি দেওয়া উচিৎ।
- আগুন থেকে, বৈদ্যুতিক স্পার্কের জায়গা থেকে অক্সিজেনের উৎস দূরে রাখতে হবে, না হলে অগ্নিকান্ড ঘটতে পারে।
- অক্সিজেন সিলিন্ডার মাঝে মাঝেই চেক করতে হবে যাতে এতে কোন ছিদ্র বা লিক না থাকে।
- COVID-19 চিকিৎসায় অক্সিজেনের মাত্রা ১০০% নয়, লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৮৮% এর কাছাকাছি, সুতরাং অতিরিক্ত অক্সিজেন প্রয়োগ করে বিষক্রিয়া বয়ে আনার দরকার নেই।
- গাইডলাইন অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে। ঔষধ এবং পদ্ধতি ব্যবহারে মিতব্য হতে হবে। বিনা প্রয়োজনে ঔষধ ব্যবহার অবশ্যই পরিত্যাজ্য।
বিশ্বে চলছে COVID-19 অতিমারী! এই অতিমারী থেকে রক্ষা পেতে গেলে সব পক্ষের সচেতনতা, পারষ্পরিক সহযোগিতা, সহমর্মিতা প্রয়োজন। সমস্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা (ব্যক্তিগত এবং সামগ্রিক), ভ্যাক্সিনেশন, রোগীর চিকিৎসা, মৃত ব্যক্তির সৎকার, নতুন ধরনের কার্যকরী এন্টি- ভাইরাল ড্রাগ তৈরীর প্রচেষ্টা ইত্যাদি সবকিছু একসাথে করতে হবে। বৈশ্বিক অতিমারীকে বৈশ্বিকভাবেই মোকাবিলা করতে হবে।